আল-আকসা ঘিরে নোংরা রাজনীতি চলছে: ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী

|

আলজাজিরা থেকে সংগৃহীত ছবি।

আল-আকসা ঘিরে নোংরা রাজনীতি চলছে মধ্যপ্রাচ্যে- এমন মন্তব্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রবেশকে ঘিরে ফুঁসতে থাকা ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভের কথাই যেন জানালেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ। তার অভিযোগ, আল আকসাকে সিনাগগে রূপান্তরের ঘৃণ্য খেলায় মেতেছে ইসরায়েলের নতুন সরকার। সে অপচেষ্টা রুখতেই সশস্ত্র অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং প্রতিবেশি লেবাননের হিজবুল্লাহ্। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়- এমন কোনো একতরফা পদক্ষেপে মেনে নেয়া হবে না। খবর আলজাজিরার।

পবিত্র ‘আল আকসা’ প্রাঙ্গণে শুধু প্রবেশই নয়, মসজিদের মূল কাঠামোয় ঢুকে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছেন ইসরায়েলের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতেমার বেন গাভির। একইসাথে, তার দম্ভোক্তিকে ফুঁসছে এখন গোটা ফিলিস্তিন।

মাহমুদ আব্বাস প্রশাসন বলছে, মসজিদের পবিত্র স্থাপনাকে সিনাগগে রূপান্তরিত করার অপচেষ্টায় রয়েছে ইহুদিরা। যা, কোনোভাবেই সফল হতে দেবে না ফিলিস্তিনিরা।

ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতায়েহ এ প্রসঙ্গে বলেন, মুসলিমদের অনুভূতির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো ইসরায়েলের নতুন সরকার। আল-আকসা মসজিদকে সিনাগগে রূপান্তরিত করার যে নোংরা খেলা খেলছে ইহুদিরা; সে অপচেষ্টা রুখতে প্রস্তুত ফিলিস্তিনিরাও। কারণ, এটি পারস্পরিক আচরণ, মূল্যবোধ, সমঝোতা, আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন।

এক প্রতিক্রিয়ায় আল আকসা মসজিদের ইমাম শেখ একরাম সাবরি বলেন, বেন গাভির খুবই হিংস্র মনোভাবের। কারণ, আল-আকসা দখল এবং প্রার্থনার সময় ভাগ করে দেয়ার ব্যাপারে তার চিন্তাভাবনা তার বহু পুরানো। সেটি বাস্তবায়নে, প্রয়োজনে মসজিদ প্রাঙ্গনে হামলা চালাতেও দ্বিধাবোধ করবে না তারা। কিন্তু, ফিলিস্তিনিরা যদি ফুঁসে ওঠে; তাহলে, পাল্টে যাবে ইতিহাস।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন- হামাসও নিচ্ছে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার প্রস্তুতি। সাথে রয়েছে দীর্ঘদিনের মিত্র- লেবাননের হিজবুল্লাহ। সাফ জানিয়েছে- সংঘাতে জড়াতে চাইলে, পুরো অঞ্চলে ছড়াবে ঘৃণার আগুন।

হামাস মুখপাত্র হাজেম কাসাম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আল আকসাসহ পুরো জেরুজালেমকে দখলে নিতে চায় ইসরায়েল। ইহুদি মন্ত্রীর সফর ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতা-আগ্রাসন বৃদ্ধির স্পষ্ট বার্তা। হামাসকে সংঘাতে জড়ানোর প্ররোচনা দিচ্ছে তারা। কিন্তু, এ সংঘাত একবার শুরু হলে পুরো অঞ্চলে ছড়াবে। তাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বলবো উগ্রপন্থীদের থামান।

হিজবুল্লাহ্ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ্ বলেন, ইহুদিরা আল আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে; জোরালো বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। শুধু ফিলিস্তিনেই বরং গোটা অঞ্চলে ছড়াবে সহিংসতা। বিন্দুমাত্র আগ্রাসন-উসকানি সহ্য করবো না। আর, দখলদারদের ইন্ধনদাতাদের বলবো, আরেকটি যুদ্ধ এড়াতে চাইলে; ক্ষ্যাপাটে কট্টরপন্থীদের থামান।

এদিকে, এ ব্যাপারে বেশ তড়িঘড়ি করেই নিজ অবস্থান স্পষ্ট করলো যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানিয়েছে, অঞ্চলটিতে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিক পর্যবেক্ষণ করছেন পরিস্থিতি।

এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র ক্যারেন জ্যঁ পিয়েরে এক বিবৃতিতে বলেন, আল-আকসা মসজিদ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দৃঢ় এবং স্পষ্ট। জেরুজালেমের পবিত্র এলাকা রক্ষাই মূল উদ্দেশ্য। মসজিদ প্রাঙ্গনের স্থিতাবস্থা নষ্ট করে- এমন কোনো একতরফা আচরণ মেনে নেয়া হবে না। এ ব্যাপারে, বরাবরের মতো অবিচল থাকবে মার্কিন প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার, ডোম অব দি রক এবং আশপাশের এলাকাকে নিজেদের ধর্মীয় স্থাপনা টেম্পল মাউন্টের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে ইহুদিরাও। খ্রিস্টানরাও সেখানে প্রার্থনায় অংশ নেন । এ কারণেই, ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটিকে ঘিরে রয়েছে বিবাদ ও বিতর্ক।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply