সঙ্গীতের জাদুকর তিনি। সুরের মায়াজালে বেঁধেছেন বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তকে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। পাঞ্জাবি, সুফি কিংবা পপ, তার সঙ্গীতে মিলেছে বাংলা বাউল সুরের ছোঁয়াও। তিনি এ আর রহমান। আজকের দিনে ৫৫ বছরে পা রাখলেন এ জীবন্ত কিংবদন্তি। সঙ্গীত দুনিয়ায় আজও তিনি এক অপার বিস্ময়।
১৯৬৭ সালে চেন্নাইয়ের এক হিন্দু পরিবারে জন্ম তার। বাবা সুরকার আর কে শেখর ছেলের নাম রেখেছিলেন দীলিপ কুমার। বয়স যখন ২১, দীলিপের বোন কঠিন অসুখে আক্রান্ত হন। এক মুসলিম পীরের দোয়ায় নাকি তার বোন সুস্থ হয়ে যান। এরপরই গোটা পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দীলিপ কুমার এর নাম হয় আল্লারাখা রহমান।
মাত্র ৬ বছর বয়সেই পিয়ানো হাতে নেন রহমান। ১১ বছর বয়সে কিবোর্ড বাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক ইলিয়ারাজার সঙ্গে। রহমানের বন্ধুরাও ছিলেন গানপাগল। বন্ধু শিবমনি, জন অ্যান্থনি ও রাজাকে নিয়ে ‘রুটস’ নামের একটি ব্যান্ডও গঠন করেছিলেন তিনি।
মিউজিকে তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন টিভি বিজ্ঞাপন দিয়ে। ৫ বছরে ৬’শরও বেশি জিঙ্গেল তৈরি করেছেন। ১৯৮৯ সালে নিজের স্টুডিও চালু করেন। সে সময়ই পরিচয় হয় পরিচালক মণিরত্নম এর সাথে। নিজের কিছু বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল শোনান তাকে। এরপরই ‘রোজা’ সিনেমার সংগীতায়োজনের দায়িত্ব পান রহমান। অ্যালবামটি ২০০৫ সালের টাইম ম্যাগাজিনের বেস্ট সাউন্ডট্র্যাকস অফ অল টাইম লিস্টে স্থান করে নেয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
মনিরত্নমের পরের সিনেমা ‘বোম্বে’র জন্য জাতীয় পুরস্কার জেতেন এ আর। এরপর, একে একে রঙ্গিলা, দিল সে, তাল। দক্ষিণী এ প্রতিভার সামনে যেনো নত হয় বলিউড। ১৯৯২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তামিল, তেলেগু, হিন্দি, মারাঠি, ম্যান্দারিন ও ইংরেজি ভাষায় উপহার দিয়েছেন দুই শ’রও বেশি অ্যালবাম। চলচ্চিত্রে নিজে প্রায় ৬২টি গানে কণ্ঠও দিয়েছেন।
১৯৯৭ সালে তিনি উপহার দেন বন্দে মাতারম-এর মতো মাইলস্টোন অ্যালবাম, যা শুধু ভারতেই বিক্রি হয় ১.২ কোটি কপি! ১৯৯৯ সালে জার্মানির কনসার্টে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গেও পারফর্ম করেন তিনি। তবে, ২০০০ সালের পর শুরু হয় রহমানের বিশ্ব জয়ের যাত্রা। ড্যানি বয়েলের ‘স্ল্যামডগ মিলিয়নিয়র’ সিনেমায় অসাধারণ সংগীতায়োজনের জন্য ২০০৮ সালে দুটি ‘অস্কার’ জেতেন তিনি।
২০১০ সালে তাকে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ তে ভূষিত করা হয় তাকে। এছাড়া, ১১টি আইফা, ২৮টি ফিল্মফেয়ার, ৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ৫ বার তামিলনাড়ু স্টেট, দুটি গ্র্যামি, একটি গোল্ডেন গ্লোব ও ১টি বাফটাসহ দেশি বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন এ সংগীত মায়েস্ত্রো। তার গান যুগযুগ ধরে শ্রোতাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ভালবেসে অনেকেই তাকে ‘মোজার্ট অব মাদ্রাজ’ বলে থাকেন।
/এসএইচ
Leave a reply