হঠাৎই দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে মাটি। সড়কে, চাষের জমি এমনকি ঘরবাড়িতেও দেখা দিচ্ছে বিশাল বিশাল ফাটল। বিস্ময়কর এ ঘটনা ঘটছে ভারতের উত্তরাখণ্ডের জোশিমঠে। আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে সাধারণ মানুষ। অস্থায়ী আবাসন তৈরি করে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের সাময়িক মাথা গোজার ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। আকস্মিক এমন ঘটনার কারণ খুঁজতে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর এপির।
হঠাৎ দেখায় মনে হবে যেন বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে বাড়িটির দেয়ালে দেখা দিয়েছে এমন ফাটল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো উত্তরাখণ্ডের জোশিমঠের এমন আরও অনেক বাড়িতেই চিড় ধরেছে। এমনকি ফাটল দেখা দিয়েছে সড়ক আর চাষের জমিতেও। নিচ থেকে উঠছে ধোঁয়া আর কাঁদাপানি।
হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মাঝেই আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে এলাকাবাসী। কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী- এই চার ধাম নিয়ে হিন্দুদের পবিত্র তীর্থ স্থান খ্যাত জোশিমঠ এখন যেন এক ভয়ের নগরী। শঙ্কা, যেকোনো সময় ধসে পড়বে ঘরবাড়ি কিংবা দেবে যাবে গোটা এলাকা। এরই মধ্যে একটি মন্দির ধসে যাবার ঘটনা আরও ভীতি তৈরি করেছে।
জোশিমঠের ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের জন্য তৎপর রয়েছে প্রশাসন। নিরাপদ স্থানে তৈরি করছে অস্থায়ী আবাসন। উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে হেলিকপ্টারও। এরইমধ্যে ছয় শতাধিক বাড়ি ছেড়ে সরে গেছে মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এ ব্যাপারে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি বলেন, শহরটিকে আমাদের বাঁচাতে হবে। সাধারণ মানুষকে সব রকম সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে তাদেরকে সরিয়ে নেয়াটা জরুরি। সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতিতে নজর রাখছি। কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চলছে আলোচনা।
হিমালয়ের কোলঘেষা শহরটিতে কয়েক বছর ধরেই দুই একটি বিচ্ছিন্ন ফাটলের ঘটনা ঘটছিলো। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে তীব্র আকার ধারণ করেছে বিষয়টি।
পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত সুড়ঙ্গ খোঁড়া, রাস্তা চওড়া করতে পাহাড়ে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটানো, একাধিক হাইড্রো ইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা, সবকিছুই প্রভাব ফেলছে উত্তরাখণ্ডের প্রকৃতিতে। সভ্যতার চাপ যেন আর নিতে পারছে না প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি। উত্তরাখণ্ডের এই চিত্র যেন আরও একবার তুলে ধরলো প্রকৃতি বনাম উন্নয়নের চিরায়ত বিতর্ককে।
এটিএম/
Leave a reply