‘হুম গুটি’ খেলা: ২৬৪ বছর ধরে ৪০ কেজির বলের পেছনে হাজারো মানুষ!

|

লাল বৃত্তে দেখানো ওই বলটির পেছনে ছুটছেন হাজারো মানুষ।

খেলার মাঠের নেই কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা। খেলোয়াড়ের সংখ্যাও হাজার হাজার। নেই কোনো রেফারি, নেই পুরস্কারও। এমনকি নেই প্রশাসনিক কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাও! আছে শুধু শক্তির লড়াইয়ের উত্তেজনা। বলা হচ্ছে. ‘গুম গুটি’ বা ‘হুম গুটি’ খেলার কথা।

৪০ কেজি ওজনের পিতলের তৈরি বল দিয়ে হয় এ খেলা। লক্ষ্য পিতলের বলটি নিয়ে নিজের এলাকায় লুকিয়ে ফেলা। ১৭৫৭ সাল থেকে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ময়মনসিংহে। কথিত আছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় জমি নিয়ে প্রজাদের বিরোধ বন্ধের উপায় হিসেবে এ খেলার প্রচলন শুরু করেন তৎকালীন জমিদাররা।

না, এটি দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে কোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের চিত্র নয়। এ ভিড়ের মধ্যেই আছে একটি পিতলের বল। বলটি নিজ এলাকায় নিয়ে যেতেই এতো শক্তি প্রর্দশন।

সে সময় জমির সীমানা নিয়ে প্রায়ই সংর্ঘষে জড়াতো প্রজারা। বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা ও সৌহার্দ্য বাড়াতেই প্রচলন ঘটে ফসলের মাঠে গুটি খেলার।

গুটি খেলায় মানুষের ভিড়ে গুটির অবস্থান বোঝা দায়। ভিড়ে মানুষের চাপে আহতও হচ্ছেন অনেকে। তবুও থামে না গুটি নিয়ে যুদ্ধ। আশপাশের চার উপজেলার মানুষ অংশ নিচ্ছেন এ খেলায়। যারা গুটি নিজের এলাকায় নিয়ে রাখতে পারবে তারাই জয়ী। খেলা চলে গভীর রাত পর্যন্ত!

৪০ কেজি ওজনের পিতলের তৈরি বল আকৃতির গুটি। পৌষ মাসের শেষ দিন ফুলবাড়িয়ার লক্ষীপুরের দৌলত মোড়লের বাড়িতে শুরু হয় খেলার প্রস্তুতি। সাজানো হয় গুটি। লাল নিশানা টানিয়ে খেলা শুরুর ইঙ্গিত দেন আয়োজকরা, এরপরই শুরু হয় বল দখলের লড়াই। খেলার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকায় খেলা গড়ায় গভীর রাত পর্যন্ত। এমনকি কখনও কখনও এ খেলা চলে ৩-৪ দিন ধরেও!

এ খেলা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে একে একে আসতে থাকেন নারী-পুরুষরা। খেলাকে কেন্দ্র করে বসে গ্রামীণ মেলা। এই উপলক্ষ্যে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান গৃহবধুরা। আনন্দে সময় কাটায় শিশুরাও।

এ খেলায় নেই কোনো পুরস্কার, আছে শুধু গুটি দখলে রাখার সম্মান। এজন্য প্রয়োজন পড়ে না পুলিশি ব্যবস্থার। ফসলের মাঠে হাজার হাজার মানুষের এ আয়োজনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার নজিরও নেই।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply