মহেশখালীতে ১০০ হেক্টর প্যারাবন কেটে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ, ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

|

মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের অমাবশ্যাখালী মৌজায় বন বিভাগের ১০০ হেক্টর জমিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ এবং দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনায় রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে মহেশখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় চার জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন— কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইলের মো. এরশাদ এবং হোয়ানকের নাজিম উদ্দিন নাজু, মো. আবদুল মতিন ও শাহাদত কবির শাহাদত।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী এই মামলা দায়ের হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, অমাবশ্যাখালী মৌজার বন বিভাগের রেকর্ডভুক্ত ৫৫০ দাগের ভূমিতে বন বিভাগ কর্তৃক সৃজিত ম্যানগ্রোভ বন বাগান বিদ্যমান। এই চার আসামিসহ আরও ৩০-৪০ জন গত শনিবার (৭ জানুয়ারি) ম্যানগ্রোভ বনে প্রবেশ করে ১০০ হেক্টর বন ভূমির ৩ হাজার গাছ কেটে ফেলে। আর মাটি কেটে রিং বাঁধের ভেতর এসব গাছ পুঁতে রাখে। রিং বাঁধের মাধ্যমে চিংড়ি চাষের জন্য এসব ভূমি উপযোগী করার চেষ্টা করে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সরকারি বাধা দেয়াসহ দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে ক্ষতিসাধনের হুমকি দেয় তারা।

এদিকে, দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন প্রণব চৌধুরী।

জানা গেছে, এরশাদ, নাজু, মতিন ও শাহাদতের নেতৃত্বে চিংড়ি ঘের করার জন্য বন বিভাগের গাছ কেটে সেখানে বাঁধ দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে প্যারাবনের গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণের সময় স্থানীয় বনকর্মীরা বাধা দেন। এ সময় বনের গাছ কাটা ও বাঁধ নির্মাণের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা পালিয়ে যান। পরে বৃহস্পতিবারও অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত চিংড়ি ঘেরের বাঁধ কেটে দেন বন বিভাগের কর্মীরা।

মো. এরশাদ চিংড়ি ঘের তৈরির চক্রের মূল হোতা বলে স্থানীয়রা জানায়। ‘বগাচতর’ নামের প্রায় দেড় হাজার বিঘার পার্শ্ববর্তী একটি চিংড়ি ঘেরের পরিচালক তিনি। নাজু তার ব্যবসায়িক অংশীদার। আর মতিনের বড় ভাই আজিজুল হক এই চিংড়ি ঘেরের ব্যবসার সাথে জড়িত। মতিন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। আর শাহাদত মতিনের ব্যবসায়িক অংশীদার।

চার আসামি ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মকছুদ আলমও প্যারাবন কাটার বিষয়ে জড়িত বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। বগাচতর নামের ওই ঘেরে এরশাদের সাথে মকছুদ আলমেরও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা রয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা অভিযোগ করেন, প্যারাবন দখলের বিষয়ে সংবাদ করার চেষ্টা করলে মারুফুল হক নামে উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের এক ব্যক্তি এ নিয়ে তদবির চালায়। তিনিও এই চক্রের সাথে জড়িত।

মামলাটি রুজু হওয়ার আগে রোববার সন্ধ্যায় এরশাদের সাথে যমুনা নিউজের কথা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। দাবি করেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

এ বিষয়ে জানতে বন বিভাগের মহেশখালীর গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম আনিসুর রহমানকে রোববার সন্ধ্যা এবং আজ সোমবার সকালে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তা দেখেননি তিনি। যদিও অনলাইনে সক্রিয় ছিলেন এই কর্মকর্তা। এছাড়া মামলার বাদী এই রেঞ্জের ঝাপুয়া বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাবুবুল হককেও একই সময়ে একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকে জানান, রাতের বেলায় এখনও ধীরগতিতে চিংড়ি ঘের তৈরির কাজ চলছে। তাদের শঙ্কা, এভাবে কাজ চলতে থাকলে চক্রটি ১০০ হেক্টর বন ভূমি দখল করে অবৈধভাবে চিংড়ি ঘের করে ফেলবে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply