নিজেকে ‘পীর’ দাবি করা গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ

|

কথিত ভণ্ডপীর শামীম আখতার।

রাজীব আহেমদ:

শামীম আখতার, নিজেকে দাবি করেন ‘পীর’ হিসেবে। নারায়ণগঞ্জের ভুঁইগড়ের হাকিমাবাদ খানকাহ-ই-মোজাদ্দেদিয়ার পীর। পীরের আড়ালে ঢাকা পড়েছে তার মূল পরিচয়। কথিত এ পীর গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট (এইচবিআরআই)।

কথিত মুরিদদের ঠিকাদারি কাজ দেয়াসহ আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িত তিনি। শামীমকে ‘ভণ্ডপীর’ উল্লেখ করে দুর্নীতি তদন্তের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও। গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল খায়রুমের সই করা এক চিঠিতে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকে ‘লেবাসধারী ভণ্ডপীর’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।

নির্দেশনা পেয়ে ২ জানুয়ারি প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের দুর্নীতি তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। সেখানেও শামীমকে ‘লেবাসধারী ভণ্ডপীর’ উল্লেখ করা হয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বললেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যে অভিযোগটি এসেছে সেটি তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার আগে এইচবিআরআই এর মহাপরিচালক ছিলেন শামীম। তার বিরুদ্ধে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মুরিদদের ঠিকাদারির কাজ দেয়াসহ বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সে ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে এইচবিআরআই। তদন্তে প্রমাণ মেলে মোট ১১টি অভিযোগের। বলা হয়, নিজের ভুঁইগড়ের মুরিদদের ঠিকাদারি কাজ দেয়াসহ আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মে সরাসরি জড়িত শামীম আখতার।

এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, একজন সরকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী দুর্নীতি বিষয়ক কার্যকলাপের সাথে জড়িত, এমন অভিযোগ থাকলে সেটা যাচাইবাছাইয়ের অধিকার দুর্নীতি দমন কমিশনের আছে।

আরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বিধি অনুযায়ী, সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বদলি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে হওয়ার কথা। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কয়েকজনকে বদলির আদেশ দেন শামীম। গত ২০ ডিসেম্বর ওই বদলি আদেশ বাতিল করে মন্ত্রণালয়। ওই বদলি আদেশে গণপূর্তের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, একটা বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। ব্যাপারটা আপাতত স্থগিত আছে। বদলি নীতিমালা করে নিয়ে এটা আবার যথানিয়মে সম্পন্ন করা হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। মোবাইল ফোনে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যিনি অভিযোগ করেছিলেন তিনি তা প্রত্যাহার করেছেন। অভিযোগকারী হিসেবে যার নাম এসেছে, তিনি নিজেই থানায় গিয়ে বলছে সে এ অভিযোগ করেনি। মানে পুরো ব্যাপারটাই ভুয়া।

উল্লেখ্য, এইচবিআরআই এর মহাপরিচলক থাকাকালীন শামীম আখতারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে দুদকও।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply