নিরাপত্তা ত্রুটির কারণেই পেশোয়ারের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা: পেশোয়ার পুলিশ

|

সংবাদ সম্মেলনে খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশের আইজি মোয়াজ্জেম জাহ আনসারি।

নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণেই পেশোয়ারের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে- প্রাথমিক তদন্তের পর এমন আশঙ্কার বিষয়টি স্পষ্ট করলো পেশোয়ার প্রাদেশিক পুলিশ বিভাগ। তারা জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই এ হামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। এদিকে, দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তান থেকে সক্রিয় করা হচ্ছে স্লিপার সেল। সেখান থেকেই পাকিস্তানের ওপর ছড়ি ঘোরাতে চায় তালেবানের সশস্ত্র শাখা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে, আর আহত হয়েছেন অন্তত ২২৫ মুসল্লি। খবর দ্য ডনের।

শোক-উৎকণ্ঠার মধ্যেই পেশোয়ারে চলছে জানাজা-দাফন। নিহতদের ৯০ ভাগই পুলিশ সদস্য হওয়ায়, নিহতদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানানো হচ্ছে শেষ বিদায়। এরইমাঝে, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করলো স্থানীয় পুলিশ বিভাগ।

খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশের আইজি মোয়াজ্জেম জাহ আনসারি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রাথমিক হিসাব অনুসারে হামলার জন্য ব্যবহৃত বোমায় ছিলো ১০ থেকে ১২ কেজি বিস্ফোরক। তবে, জোরালো বিস্ফোরণে সবাই মৃত্যুবরণ করেননি। বরং, ছাদ-পিলার ধসে পড়ায়; সেগুলোর নীচে চাপা পরে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। সুরক্ষা ব্যবস্থার কোথাও না কোথাও অবশ্যই ঘাটতি ছিলো। সে কারণেই ভয়াবহ এ হামলা। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি খুঁজতে তদন্ত চলছে। শীঘ্রই অপরাধীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।

এদিকে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অভিমত- কৌশলে সুরক্ষিত অঞ্চলটিতে ঢোকানো হয়েছে শক্তিশালী বিস্ফোরক আর হামলাকারীকে। বাইরে থেকে নির্দেশনা পেয়ে, চালানো হয় হামলা। যার সাথে অভ্যন্তরীন কারো যোগসাজশ রয়েছে বলেও ধারণা তাদের।

পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আইজাজ আওয়ান এ প্রসঙ্গে বলেন, গত এক সপ্তাহে রেডজোনে ১৪০টি যানবাহন ঢুকেছে। খুব সম্ভবত, ওগুলোর কোনো একটিতেই লুকানো ছিলো বিস্ফোরক ও অন্যান্য সরঞ্জাম। পরে সেগুলো দিয়ে বোমা বানানো হয়। আগেই সুরক্ষিত অঞ্চলটিতে আত্মগোপনে ছিল হামলাকারী। সুযোগ বুঝে সে হাজির হয় মসজিদে। যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজের না হয়; তাহলে সেটা পাকিস্তানিদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার।

তালেবানি স্টাইলের হামলার সাথে আফগানিস্তানের জড়িত থাকার প্রসঙ্গও সামনে এনেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের অভিযোগ- প্রতিবেশীকে চাপে ফেলতেই পাকিস্তানে স্লিপার সেল সক্রিয় করছে তালেবান।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আইজাজ আওয়ান আরও বলেন, একে তো তালেবান সশস্ত্র। তার ওপর, আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকার কারণে- আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ পাবার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো বাধা নেই। যেকোনো মুহূর্তে তারা পাকিস্তানে ঢুকতে পারে; সক্রিয় করতে পারে স্লিপার সেল। এমনকি, ঘৃণ্যতম এ হামলার জন্য তারা ভাড়াটে আততায়ীও ব্যবহার করতে পারে। তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কোনো অভিযোগ তোলা ঠিক হবে না। কিন্তু, চ্যালেঞ্জের মুখে নিশ্চুপ থাকলেও নাশকতা বাড়বে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) নামাজ চলাকালে মসজিদে হামলার জন্য বিগত পিটিআই সরকারের ব্যর্থতাকে দায় দিচ্ছে শাহবাজ প্রশাসন। তাদের অভিযোগ, গেলো মার্চে শিয়া মসজিদে নারকীয়তা চালানোর পর, পেশোয়ারের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সাথে সমঝোতায় যেতে পারেননি, ইমরান খান। তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তা বাহিনীর রেডজোনে ঢোকার সাহস পেলো জঙ্গিরা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply