বরিশালে ৭৫ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব্যে মুখ থুবড়ে পড়ছে। সহকারী শিক্ষকরা বলছেন, সকল অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করতে চাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। আর প্রধান শিক্ষকের পাল্টা অভিযোগ, কতিপয় সহকারী শিক্ষক তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এদিকে, ম্যানেজিং কমিটির অবস্থানও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তার অনিয়মের বিষয়ে জানা আছে শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও। সব মিলিয়ে স্কুলটিতে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।
বরিশাল নগরীতে অবস্থিত মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাসরিন সুলতানা। তার অভিযোগ, তিনি ৩ মাসের অন্তঃসত্বা অবস্থায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এক ঘণ্টার ছুটি চেয়েছিলেন প্রধান শিক্ষককের কাছে। সে সময় তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ না দেয়ায় নষ্ট হয়ে যায় গর্ভের সন্তান।
মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন, ছুটির দরখাস্ত নিয়ে যাওয়ার পর উনি আমার সাথে প্রচণ্ড খারাপ আচরণ করেন এবং তিনি আমাকে সাময়িক ছুটিতে যেতেও দেননি। সারাদিন পেটে ব্যথা নিয়ে আমি স্কুলেই অবস্থান করি। এরপর, রাতে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের মাধ্যমে জানতে পারি যে আমার মিসক্যারেজ হয়েছে। এভাবে আমার তিন মাসের বাচ্চাটাকে হারাতে হয়েছে।
১৯৪৭ সালে স্থাপিত স্কুলটিতে গিয়ে, প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে পাওয়া গেল অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগ।
ওই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করে জানালেন যে, গত ২৪ নভেম্বর আমার স্বামীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল । সে জন্য আমি দুইদিনের ছুটির আবেদন করি। যেদিন ছুটির প্রয়োজন ছিল ওইদিন সকালে আমাকে প্রধান শিক্ষক ফোন দিয়ে বলে যে আমাকে ছুটি দেয়া হবে না।
আরেক সহকারী শিক্ষক জানালেন, উনি কিছু অবৈধ কাজ করেন। অবৈধ কাজগুলোতে যখন আমি সহযোগিতা করি না তখন আমি তার কাছে খারাপ হয়ে যাই। লেখাপড়ার পরিবেশ যদি অনুকূলে না থাকে তাহলে এটা সবার জন্যই ক্ষতির কারণ হতে যাচ্ছে। আমাদের এই স্কুলটি বিভাগীয় পর্যায়ের সেরা স্কুল ছিল। আমরা মনেপ্রাণে চাই স্কুলের সেইসব দিন আবারও ফিরে আসুক।
প্রধান শিক্ষকের দাবি, সহকারি শিক্ষকদের একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যদিও এসব কথা ক্যামেরায় বলতে রাজি নন তিনি।
মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমার কোনো অফিসিয়াল অনুমতি নেই এ ব্যাপারে বলার, তাই বলবো না। আপনারা ক্যামেরা বন্ধ করেন আপনাদেরকে দেখাবো। এসব অফিসাররা দেখবেন। আমি চা আনাই আপনারা চা খান।
শিক্ষকদের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। তাই অভিযোগগুলো লিখিত আকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জানায় ম্যানেজিং কমিটি। তাতে অবশ্য ফল হয়নি।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাইদুল হক পলাশ বলেন, রিপোর্টে সুপারিশ করা হয় তাকে অন্যত্র বদলি করানোর জন্য। কিন্তু, তাতে কোনো কাজ হয়নি। তার পক্ষে এতোবড় স্কুল চালানো সম্ভব না। তিনি অপারগ। এটা রিপোর্ট আকারে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কিন্তু, মহাপরিচালকের দফতর থেকে ওই চিঠি কোথায় গেছে তা আমি বলতে পারবো না।
এর আগে ঝালকাঠি জেলায় দুটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদা খাতুন। স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সেখান থেকে তাকে বদলি করা হয়। হয় বিভাগীয় মামলা।
/এসএইচ
Leave a reply