চলতি মাসেই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হচ্ছে ভারত। প্রতিবেশি চীনকে টপকে ১৪০ কোটি ছাড়াবে দেশটির জনসংখ্যা। খবর রয়টার্সের।
সাম্প্রতিক আদমশুমারি বলছে, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে মুসলিমরা। সবশেষ জরিপ অনুসারে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ২০ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি। যা মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। গেলো দুই দশকে মুসলিমদের সন্তান জন্মদানের হার বেড়েছে।
রাইজদা ইয়াহিয়া নামের ভারতীয় এক মুসলিম নারী বলেন, মানুষভেদে দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা থাকে। মূলত ধর্মভীরুদের বিশ্বাস, সন্তান আল্লাহর দেয়া উপহার। সুতরাং তারা জন্মনিয়ন্ত্রক পন্থা অবলম্বন করেন না। সে কারণেই ১০-১২টি সন্তান থাকে। কিন্তু আমার চিন্তাভাবনা, কতো টাকা রোজগার করছি? সেটা দিয়ে দুটি সন্তানের ভালোমতো ভরণপোষণ করা সম্ভব কি না?
আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটির সর্বোচ্চ মুসলিমের বসবাস উত্তর প্রদেশে। যা কি না কট্টর হিন্দু অধ্যুষিত রাজ্য। তবে, শতাংশের হিসাবে শীর্ষ অবস্থানে লাক্ষাদ্বীপ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির প্রায় ৯৭ শতাংশ অধিবাসীই মুসলিম। অবশ্য, সময়ের সাথে পাল্টাচ্ছে সন্তান জন্মদানের চিন্তাভাবনাও।
দেশটির আরেক বাসিন্দা বলেন, আমরা ৬ ভাই-বোন। বাবা ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তা। তার স্বল্প বেতনে সবার লেখাপড়া তো দূরের ব্যাপার। খাবার ঠিকভাবে জুটতো না। তাই বড় দুই ভাই ব্যবসা শুরু করে ছোটদের পড়িয়েছে অবশ্যই, সন্তান লালনপালনের খরচটা একটি বড় ইস্যু। তবে, অতীতের তুলনায় নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ। আমরা প্রথমে নিজেদের শিক্ষা আর পেশা গুছিয়ে নেই। তারপর চিন্তা করি, সন্তান গ্রহণ করবো কি না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিন্দু অধ্যুষিত রাজ্যগুলোয় মুসলিমদের সংখ্যা বাড়লেও আধুনিক চিন্তাভাবনা প্রসার ঘটাচ্ছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণকে বর্তমানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। বরং আর্থিক অবস্থাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়।
ভারতের শিক্ষাবিদ শেবা আসলাম ফাহমি বলেন, একটি সন্তান থাকাটাই অনেক বড় সৌভাগ্য। অতীতে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ছিল; যা সময়ের সাথে পাল্টাচ্ছে। ভারতীয় মুসলিমরাও হয়ে উঠছেন আধুনিক চিন্তাধারার। বর্তমানে, জন্ম নিয়ন্ত্রণের অনেক পন্থা রয়েছে। সুতরাং কোনো অপরাধবোধের সুযোগ নেই।
বাড়তি জনসংখ্যাকে কীভাবে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়, সেটির ওপর গুরুত্বারোপ করছে দেশটির রাজ্য সরকাররা। উত্তর প্রদেশ প্রচারণা চালাচ্ছে ‘দুটি সন্তান ভালো হয়, একটি হলে মন্দ নয়’ স্লোগান। কিছু জায়গায়, পরিবার ছোট রাখার বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা; এমনকি চাকরিতে আবেদনের সুযোগও।
/এমএন
Leave a reply