আমাজনের গহীন বনে যেভাবে ৪০ দিন টিকে ছিল ৪ শিশু?

|

অ্যামাজনের জঙ্গলে কলম্বিয়ার চার শিশুর টিকে থাকার অভিজ্ঞতা যেকোনো গল্পের চেয়েও যেন রোমাঞ্চকর। গহীন বনে টানা ৪০ দিন লড়াই করতে হয়েছে বিষধর সাপ, বন্যপ্রাণী আর পোকামাকড়ের সাথে। পড়তে হয়েছে বিরুপ আবহাওয়ার কবলেও। প্রকৃতির সাথে মানুষের পরিচিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তাই যেন সামনে এলো আরেকবার। গাছপালা থেকে খাবার সংগ্রহ, ঘন জঙ্গলে খাবার পানির সন্ধান। বেঁচে থাকার জন্য হাজার বছরের পুরনো কৌশল ব্যবহার করতে হয়েছে ছোট ছোট শিশুগুলোকে। আর এতেই বেঁচেছে প্রাণ। খবর সিএনএন এর।

শুক্রবার (৯ জুন) শেষ রাতের দিকে কলম্বিয়ার গহীন জঙ্গল থেকে রেডিওর মাধ্যমে ভেসে আসে সেনাদের আওয়াজ-মিরাকল, মিরাকল। যে কথা শোনার জন্য রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষায় ছিল গোটা জাতি। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, খুঁজে পাওয়ার পরই বড় বোন লেসলির প্রথম কথা ছিল সে ক্ষুধার্ত। আরেক শিশু জানিয়েছিল তার মায়ের মৃত্যুর খবর।

উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করা আদিবাসী স্বেচ্ছাসেবী হেনরি গুয়েরেরো জানান, তারা রাইস পুডিং আর রুটি খেতে চেয়েছে। ছেলেটি বেশি দুর্বল। হাঁটতেও পারছে না। তারা বিমান থেকে তোয়ালে, স্ক্রু, ফ্ল্যাশলাইট, ব্যাটারি, দু’টি মোবাইল আর পানির বোতল সাথে নিয়েছিল।

চার শিশু জীবিত উদ্ধারের পর থেকেই জন্ম নেয় নানা কৌতূহল। অ্যামাজনের ঘন বনে টানা ৪০ দিন কীভাবে টিকেছিল তারা? উদ্ধারকারীরা জানান, অ্যামাজনের খুব ঘন অংশে হারিয়ে যায় শিশুরা। সাপ, জাগুয়ার, বুনো কুকুর আর মশার সাম্রাজ্যে বেশ কঠিন ছিল তাদের বেঁচে থাকার লড়াই। তবে কাজে এসেছে, আদিবাসী পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষা।

হুইতোতো আদিবাসী গোষ্ঠীর এই শিশুদের পরিবার জানায়, ভাইবোনের বড় দু’জন ১৩ বছরের লেসলি ও ৯ বছরের সোলেইনি বেশ পরিচিত ছিল জঙ্গলের সাথে। পশু শিকার, মাছ ধরার কৌশল জানতো তারা। কোন শেকড়, বীজ বা ফল খাওয়ার উপযুক্ত, কোনটি খাওয়া যাবে না, এমনকি কোন পাতা ব্যবহারে পানি বিশুদ্ধ করা যাবে তাদের জানা ছিল সেসব কিছু।

বনের মধ্যে বেশ কয়েকবার জায়গা পরিবর্তন করেছিল শিশুরা। চুল বাঁধার ব্যান্ড ব্যবহার করে ডালপালা দিয়ে তৈরি করেছিল আচ্ছাদন। জঙ্গলের মধ্যে ভারী বৃষ্টির কবলেও পড়তে হয়েছে তাদের। তবুও হারায়নি মনোবল। আর সবাইকে আগলে রেখেছে বড় বোন লেসলি। প্রকৃতির সাথে শিশুদের সম্পর্ক আর জ্ঞানের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।

প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেন, তারা জঙ্গলের শিশু ছিল। এখন কলম্বিয়ার শিশুদের প্রতীক। প্রতিকূল পরিবেশে তাদের টিকে থাকার অভিজ্ঞতা ইতিহাসে লেখা থাকবে।

প্রসঙ্গত, গত ১ মে আরারাকুয়ারা থেকে গুয়ারাভিয়ারে প্রদেশে যাওয়ার পথে অ্যামাজনে বিধ্বস্ত হয় সেসনা টু জিরো সিক্স বিমান। মা ও পাইলটসহ তিনজনের মৃত্যু হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় চার ভাইবোন। যাদের বয়স ১৩, ৯, ৪ ও ১ বছর। কিছু আলামত দেখে তাদের বেঁচে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় উদ্ধারকারী দল। ঘন জঙ্গলের প্রায় ২ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অভিযানে অংশ নেয় দেড়শ সেনা ও ২০০ আদিবাসী স্বেচ্ছাসেবী।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply