অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইস্যুতে দেয়া মোদির বক্তব্যে তোলপাড় ভারতে

|

এনডিটিভি থেকে সংফৃহীত ছবি।

ইউনিফর্ম সিভিল কোড-ইউসিসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইস্যুতে তোলপাড় চলছে ভারতে। মঙ্গলবার (২৭ জুন) এক সমাবেশে এ নীতিমালা প্রণয়নে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেন, এক দেশে ধর্ম বা সম্প্রদায়ভেদে আলাদা বিধান থাকার সুযোগ নেই। ভোট ব্যাংকের রাজনীতির জন্য বিরোধীরা তিন তালাকের মতো ইস্যুকে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ মোদির। প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। তাদের অভিযোগ, অভিন্ন বিধির নামে শুধু মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে। খবর এনডিটিভির।

দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে ছিলো, ইউনিফর্ম সিভিল কোড- ইউসিসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। বিবাহ, সম্পত্তির বণ্টনের মতো ইস্যুতে সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের জন্য অভিন্ন বিধান চায় দলটি। মঙ্গলবার, ভূপালে আয়োজিত এক সমাবেশে, নতুন করে ইস্যুটি তোলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী। জানান, এক দেশে দুই নীতি গ্রহণযোগ্য নয়।

ভূপালে দেয়া বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পরিবারের একেক সদস্যের জন্য একেক নিয়ম থাকলে- সেই সংসার কী চালানো সম্ভব? তাহলে, দুই আইনের মাধ্যমে একটি দেশ কীভাবে চলবে? সংবিধানেও প্রত্যেক নাগরিককে সমঅধিকার দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও বারবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর তাগিদ দিচ্ছে। অথচ, বিরোধীরা করছেন ভোট ব্যাংকের রাজনীতি।

মোদির অভিযোগ, বিরোধীরা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চায় না। কারণ, তাতে ভোট ব্যাংকের রাজনীতি ব্যাহত হবে। এ প্রসঙ্গে তিন তালাকের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিরোধীদের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোদি।

নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, যারা ৩ তালাকের পক্ষে ওকালতি করছেন; তারা মুসলিম মেয়েদের ঠকাচ্ছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের এই পদ্ধতির সাথে যদি ইসলামের যোগসূত্র থাকতো; তাহলে বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলো এটি নিষিদ্ধ করতো না। মিসরে ৮০-৯০ বছর আগেই এ নিয়ম বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, জর্ডান, সিরিয়া, বাংলাদেশে কেনো এই নিয়ম নেই?

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ভারতের বিরোধী রাজনীতিকরা। অনেকে বলছেন, সনাতন ধর্মেই সবচেয়ে বেশি বৈষম্য। অভিন্ন বিধি চালুর আগে, হিন্দু ধর্মের জন্যই সেটির প্রয়োগ করা উচিত বলে মন্তব্য তাদের।

এ প্রসঙ্গে তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা টিকেএস এলোঙ্গাভান বলেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাইলে আগে সেটি হিন্দুধর্মের ওপর বাস্তবায়ন করুন। দলিত, নিম্নবর্ণের হিন্দু বা তফশিলি জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ভারতের প্রত্যেক মন্দিরে পূজা করার অনুমতি দেয়া উচিত। কেনো সবসময় উচ্চবর্ণের হিন্দুরাই মন্দিরে প্রার্থনা করবেন? আমরা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাই না। কারণ, প্রত্যেক ধর্মের সমান সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে ভারতের সংবিধান।

কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুর বলেন, সরকার তিন তালাক নিয়ে মাথাব্যাথার বহু আগেই পদ্ধতিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। আমরাও বলছি না যে ৩ তালাক খুব ভালো রীতি। কিন্তু, সরকার কিভাবে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের বিবাহ বিচ্ছেদকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে? যেখানে, হিন্দু সম্প্রদায়েও স্ত্রীকে বঞ্চিত করে ফেলে যাচ্ছেন স্বামীরা!

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূপালের সমাবেশ দিয়ে মূলত: ২০২৪ সালের নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরলো বিজেপি। যাতে স্পষ্ট, দলটির প্রচারণায় এবারও প্রাধান্য পাবে ধর্মীয় পরিচয়।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply