উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘে বিতর্ক

|

রয়টার্স থেকে সংগৃহীত ছবি।

উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) পরীক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) আইসিবিএম উৎক্ষেপণ ইস্যুতে জাতিসংঘের বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো পিয়ংইয়ং। খবর আলজাজিরার।

এর আগে, বুধবার (১২ জুলাই) আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল হোয়াসং-১৮ ছুঁড়ে ফের হৈচৈ ফেলে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। সলিড-ফুয়েলের এই ক্ষেপণাস্ত্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে পিয়ংইয়ং। জলসীমায় পতিত হওয়ার আগে মিসাইলটি ৭৪ মিনিটে এক হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দেয় মিসাইলটি। সফল এ পরীক্ষাকে দেশটির পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বৈঠকে পিয়ংইয়ংয়ের ক্রমবর্ধমান পরমাণু কর্মসূচির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কিম প্রশাসনকে উস্কানি দেয়ার জন্য এদিন চীনকে সরাসরি দায়ী করেছে রাশিয়া। অপরদিকে, কোরীয় উপদ্বীপ ঘিরে ওয়াশিংটন ও সিউলের সামরিক কার্যক্রম বৃদ্ধিকে পাল্টা দোষারোপ করছে পিয়ংইয়ং, মস্কো ও বেইজিং।

উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম পরীক্ষা চালানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধি জেফরি ডিলরেন্টিস বলেন, উত্তর কোরিয়ার এমন উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জাতিসংঘ নীবর থাকবে না। পিয়ংইয়ংকে সমন্বিতভাবে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের এ আচরণের কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে। রাশিয়া ও চীন কাউন্সিলকে এ বিষয়ে কথা বলতে বাধা দিয়েছে। ফলে উত্তর কোরিয়া বারবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সাহস দেখাচ্ছে। মনে রাখতে হবে যে, বেআইনি এ কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে দেয়া যাবে না।

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বাক্যবানে উত্তপ্ত ছিলো জাতিসংঘের বৈঠক। অঞ্চলটিকে ঘিরে ওয়াশিংটন-সিউলের ক্রমবর্ধমান সামরিক কর্মসূচিকে পিয়ংইয়ং এর পদক্ষেপের জন্য দায়ী করে রাশিয়া-চীন।

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর আনা এভস্টিগনিভা বলেন, কোরীয় উপদ্বীপ এবং উত্তর-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নিরপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ- এমন যেকোনো সামরিক তৎপরতার বিরোধিতা করে আসছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপানসহ কয়েক দেশের আহ্বানে আজকের এ বৈঠক হয়েছে। তবে আমরা আরও একবার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। কেননা, তারাই তথাকথিত প্রতিরোধের নামে অঞ্চলটিকে সামরিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করেই চলেছে।

জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ঝাং জু বলেন, কোরীয় উপদ্বীপ ইস্যুতে চীনের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক ইস্যু নিষ্পত্তিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তেজনাপূর্ণ ও সংঘাতময় হয়ে উঠছে।

এদিকে, উত্তর কোরিয়ার দাবি- বিরোধীদের সামরিক কর্মকাণ্ডের জেরে দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করছে তারা।

জাতিসংঘে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি কিম সং বলেন, দেশের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ড পিয়ংইয়ংয়ের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

প্রসঙ্গত, উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম পরীক্ষার চালানোর জবাব দিতে পরেরদিনই অঞ্চলটিতে যৌথ বিমান মহড়া চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply