টি-টোয়েন্টিতে নিউ ব্র্যান্ডের ক্রিকেট এবং আনপ্রেডিক্টেবল সাকিব

|

ছবি: এএফপি

বর্তমানে বাংলাদেশের খেলা দেখলে টের পাওয়া যায় যে, সাকিবরা এখন আর মান্ধাতা আমলের মানসিকতা নিয়ে পড়ে থাকছে না। তারা আধুনিক ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে অন্তত তাদের নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলার চেষ্টাটা নজরে পড়ছে।

গত বছর আগস্টে সাকিব আল হাসানকে টি-টোয়েন্টি দলের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর বাংলাদেশের পোস্টার বয় এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ২০২২’এ আমাদের চেষ্টা থাকবে নতুনভাবে ক্রিকেট খেলার এবং এর রেজাল্ট পাওয়া যাবে ২০২৩’এ। সাকিবের কথার প্রতিধ্বনি টের পাওয়া যাচ্ছিল বাংলাদেশের খেলার ধরনে। এর আগে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে টাইগারদের জয় আসতো অনেক দিন পরপর। জয়ের অভ্যাস গড়ে উঠতে দেখা যেতো না। দেখা যায়নি মাঠের খেলায় কোনো ইতিবাচক দিক।

সাকিব এসে প্রথমে দলের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে প্রয়াস চালান। ফিটনেসের দিকে গুরুত্ব দেন। ফলস্বরূপ বাংলাদেশের ফিল্ডিং ও রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ইতিবাচক চেহারা দেখা যায়। দলে প্রাধান্য পায় ফিটনেস সচেতনতা এবং ভয়ডরহীন মানসিকতার তরুণ প্লেয়ারদের। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের খেলায় এর প্রয়োগ ঘটাতে দেখা যায়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপের মূল পর্বে দু’টি ম্যাচ জেতে। টাইগারদের টি-টোয়েন্টি খেলার ধরনে বদল আসে। হারার আগে তারা হারতে নারাজ।

২০২৩’এর ফেব্রুয়ারিতে বিসিবি শ্রীলঙ্কান চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়। মনে হলো, সাকিব যেন তার আদর্শ সঙ্গী পেলেন। কেননা, উভয়ের মানসিকতাই প্রায় এরকম– দলে টিকে থাকতে হলে পারফর্ম করেই টিকে থাকতে হবে। অতীতের রেকর্ড বাজিয়ে টিকে থাকা যাবে না। ব্যক্তিগত রেকর্ডের দিকে না তাকিয়ে ইন্টেন্ট দেখাতে হবে দলের জয়ের। অল্প করে হলেও জয়ে ইমপ্যাক্ট রাখতে হবে। থাকতে হবে গেম অ্যাওয়ারনেস। এরই সূত্র ধরে স্কোয়াডে দেখা যায় রনি, হৃদয়, শামীমদের মতো সাহসী ক্রিকেটারদের।

কাপ্তান সাকিব নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছিল, রোববার (১৬ জুলাই) আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে বাংলাদেশ দল তা বাস্তবায়ন করেছে। টাইগাররা সাকিবের কথার বাস্তবায়ন করেছে নিজেদের মাঠে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশ করে। নাসুম-আফিফরা সাকিবের কথার বাস্তবায়ন করেছে পরপর তিনটি সিরিজ জিতে, এর আগে এমনটা দেখা গেছে মাত্র একবারই।

অধিনায়ক সাকিবেরও রয়েছে আনপ্রেডিক্টেবল সিদ্ধান্ত নেয়ার সহজাত ক্ষমতা। তার ধাতে মুখস্ত ক্যাপ্টেন্সি নেই। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে জানেন। কোচ হাথুরুর সাথে মিলে সাজাতে পারেন ভিন্ন ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি। ব্যাটিং বা বোলিং অর্ডার শাফল করতে এক বিন্দুও সন্দেহে ভোগেন না। দলের ভেতর ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আসতে তার রয়েছে বিরাট ভূমিকা। সদ্য শেষ হওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে একইসাথে বাগিয়ে নিয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজের পুরস্কারও।

এ বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আর কোনো টি-টোয়েন্টি খেলা নেই। তবে টি-টোয়েন্টি দলের খেলার ধরন নিজেদের মধ্যে আনতে পারলে অথবা মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারলে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ ভালো করতে পারবে বলে ক্রীড়াপ্রেমিদের বিশ্বাস।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply