নির্বাচন ঘিরে নয়, প্রশাসনে রদবদলকে নিয়মিত কার্যক্রম বলছে সরকার

|

আলমগীর স্বপন:

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ধাপে ধাপে মাঠ প্রশাসন সাজাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরইমধ্যে ডিসি-এসপি ও ইউএনও পদে বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। তফসিলের আগে পরে এসব পদে আসতে পারে আরও নতুন মুখ। এক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে সরকারের ঘনিষ্ঠ ও পছন্দের কর্মকর্তারা। তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী দাবি করেছেন, নির্বাচন নয়, নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতি হচ্ছে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। নির্বাচনের সময় ইসির নির্দেশনায় চলবে মাঠ প্রশাসন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর প্রায় ৫ মাস। এর আগেই পছন্দমতো ডিসি, এসপি ও ইউএনও নিয়োগ দিয়ে মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায় সরকার। এরইমধ্যে চলতি জুলাইয়ে ২৮ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ হয়েছে। ইউএনও হয়েছেন ৪৫ জন। ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার ৬৯ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থক ও ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি। নির্বাচনের সময় তারা রিটার্নিং অফিসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন।

যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলছেন, নিয়োগ ও রদবদল প্রশাসনের রুটিন কর্মকাণ্ড। এর সাথে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, দুই বছর যাদের পূর্ণ হয়ে গিয়েছে কিংবা যেখানে যাদের অযোগ্যতা দেখছি, তাদেরকে সরানো হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে কাউকে বদলি করা হচ্ছে না।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, যে প্রমোশন এবং পদায়নগুলো হচ্ছে তা কিন্তু সবই নিয়মমাফিক, যথাসময়ে এবং যৌক্তিক। সক্ষমতা দেখাতে হয়, প্রমাণ করতে হয়, যোগ্যতা প্রমাণ করেই কিন্তু ডিসি হতে হয়। সে কারণে, রাতারাতি কেউ ডিসি হতে পারে না।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পরে ডিসি-এসপি-ইউএনও পদে আরও নতুন মুখ দেখা যাবে। ২২ ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেতে পারেন যুগ্মসচিব পদে। উপসচিব হতে পারেন ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, জনপ্রশাসনের সাথে দূরত্ব কমাতে পদোন্নতি পেতে পারেন ৫২৯ পুলিশ কর্মকর্তা। মাঠ প্রশাসন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব গত সপ্তাহে সচিব কমিটির জরুরি বৈঠকও করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর। দুই একজন যদি অযোগ্য প্রমাণ হয়ে যায়, আবার নির্বাচন কমিশনও অনেক সময় বলে, একে ওকে বদলি করতে হবে। সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের থাকবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের দুটি বিষয়ের কথা বলেছি। এক, যাদের তুলে নিতে হচ্ছে, যাদের সময় শেষ হয়েছে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা এবং দুই, যারা ২২ ব্যাচে ছিলেন তারা হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে জয়েন্ট সেক্রেটারি হবেন।

তবে এবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ ও যুক্তরাষ্ট্রের আগাম ভিসা নীতি কতটা চাপের কারণ হবে মাঠ প্রশাসনের জন্য; এমন প্রশ্নের জবাবে দাবি করা হয়েছে, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সঠিক ভোটার লিস্ট থেকে বুথগুলো, নির্বাচন কমিশন এসব সাজাচ্ছে। আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হয়ে থাকে। সেগুলো আমরা করছি। অন্য কোনো চাপ এখানে নেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিদেশি বন্ধুদের সাথে তারা সম্পর্ক স্থাপন করছেন। তাদের দিয়ে কিছু একটা করানোর চেষ্টা করছেন। আমরা মনে করি, আমাদের সংবিধান যেভাবে আছে সেটাকে সেভাবেই অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য। আমরা সেই কাজটিই করবো।

নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে এরইমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। যদিও দুই মন্ত্রী বলছেন, বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply