৪২ বছর পর চুরি যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেলেন মা

|

প্রথমবারের মতো মাকে 'দীর্ঘ প্রতীক্ষিত' আলিঙ্গন করছেন সন্তান। ছবি: এপি

৪২ বছর পর মায়ের সাথে দেখা হলো সন্তানের। জন্মের পরপরই নার্সরা চুরি করে নিয়ে যায় জিমি থাইডেনকে। বেসরকারি এক গবেষণা সংস্থার প্রচেষ্টায় অবশেষে ভূমিষ্ঠের চার দশক পর জন্মদাত্রি মা মারিয়া গনজালেসের কাছে ফেরেন ওই ব্যক্তি। খবর এপির।

৪২ বছর আগে জন্মের পরপরই মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় জিমি থাইডেনকে। তাই জন্মের পর প্রথমবারের মতো মাকে কাছে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি কেউই। ৪২ বছর ধরে যেকথাটা মনের গহীন কোণে চেপে রেখেছিলেন জিমি, মাকে জড়িয়ে ধরে অবশেষে সেই কথাটা বলতে পারলেন। আনন্দের অশ্রু মিশ্রিত কণ্ঠে তিনি বলেন, মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। জিমি থাইডেন জানান, আমার মা আমাকে হারিয়ে তিনি অনেক কেঁদেছেন। ঈশ্বরের কাছে তিনি প্রার্থনা করতেন, যেন মৃত্যুর আগে অন্তত একবারের জন্য হলেও তিনি তার সন্তানকে দেখে যেতে পারেন।

জানা যায়, জন্মের সময় অকালীন বা প্রিম্যাচিউর শিশু হিসেবে পৃথিবীতে আসেন জিমি। কয়েকদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার পর মারিয়া গনজালেসকে জানানো হয়, মারা গেছে তার সন্তান। অথচ জীবিত শিশু জিমিকে বিক্রি করে দেয়া হয় একটি চক্রের কাছে। পরে কয়েকটি হাত ঘুরে পালক সন্তান হিসেবে জিমিকে লালন পালনের সুযোগ পান এক মার্কিন নিঃসন্তান দম্পতি। এরপর থেকে পালক বাবা-মাকে নিজের আপন বাবা মা হিসেবে জেনে আসছিলেন জিমি। পালক পিতা মাতার পরিচয় জানার পর শুরু করেন নিজের জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজ।

জিমি থাইডেন বলেন, বিগত ৪ দশক কতটা কষ্ট পেয়েছি, তা আমার মতো ভুক্তভোগীরা জানে। আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমার জন্মদাত্রী মায়ের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আমার পালক পিতা-মাতার সাথেও প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের পুরো জীবনটা মিথ্যার সাথে কেটেছে বলে জানিয়েছেন ৪২ বছর বয়সী সন্তান।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে জিমি যোগাযোগ করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা নস বাসকামোসের সাথে। মূলত হারিয়ে যাওয়া মানুষদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কাজ করে এই সংগঠন। প্রায় ২ বছর প্রচেষ্টার পর খুঁজে পাওয়া যায় জিমির পরিবারের সদস্যদের। তাদের তদন্তেই উঠে আসে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনাটি। নস বাসকামোসের পরিচালক কন্সতাঞ্জা দেল রিও বলেন, সিনেমাতে যেমন দেখা যায়, অর্থের কারণে বাচ্চাদের বিক্রি করা হচ্ছে; বিষয়টি সেরকম না। সে সময় বাচ্চাদের হাসপাতাল থেকে চুরি করা হতো এবং বিক্রি করা হতো। গরীব পরিবারের শিশুদের তাদের পিতা-মাতার অজান্তেই চুরি করা হতো। তারা কোনো আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারতেন না।

গত ১ দশকে প্রায় সাড়ে চারশ হারিয়ে যাওয়া শিশুকে নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে বেসরকারি সংগঠন নস বাসকামোস। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে নাটকীয় এমন ঘটনার পর শিশুপাচারের ইস্যু নিয়ে সরগরম দেশটির গণমাধ্যম।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply