চলতি বছরে বসবাসের জন্য কোন শহরের অবস্থান কেমন, তা গত জুলাইয়ে প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তাতে ঢাকার অবস্থান ১৭৩টি শহরের মধ্যে ১৬৬তম। অর্থাৎ শেষের দিক থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে ঢাকা। বিশ্বের বিভিন্ন শহরের আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামোসহ নানা বিষয়কে সূচক ধরে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতি বছর বাসযোগ্য শহরের তালিকা তৈরি করে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৩ অনুযায়ী বাসযোগ্য সেরা ৫ শহরের কথা তুলে ধরা হলো:
১. ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাসযোগ্যতার সূচকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার অবনস্থান প্রথম। স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অবকাঠামোতে নিখুঁত স্কোর- সব মিলিয়ে ভিয়েনার আকর্ষণ সেরা। ভিয়েনার সংরক্ষিত ঐতিহাসিক নিদর্শন, নির্ভরযোগ্য গণপরিবহন ব্যবস্থা, শিশুদের লালনপালনের সাশ্রয়ী ব্যয় এবং শহরের ক্যাফে, থিয়েটার এবং এমনকি অ্যালকোহল শপের সাথে সহজ যোগাযোগ— তাই ভিয়েনা সারাজীবনের জন্য থাকার মতো একটি জায়গা। শুধুমাত্র সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাস আর নানা ধরনের অনুষ্ঠানের জন্যই ভিয়েনার বাসযোগ্যতা অনেক বেড়েছে।
ভিয়েনায় বিশেষ করে শোনব্রুন প্যালেস, হফবার্গ ও ভিয়েনা সিটি হলসহ অনেকগুলো ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে। শহরটি তার সঙ্গীত ঐতিহ্যের জন্যও সুপরিচিত। এছাড়াও মোৎসার্ট, বেঠোভেন ও স্ট্রসের মতো বিখ্যাত সুরকাররা এই শহরে বসবাস ও কাজ করেছেন। তাছাড়াও, অসংখ্য জাদুঘর, থিয়েটার ও অপেরা হাউসের মাধ্যমে ভিয়েনার বাসিন্দারা সহজেই এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন। এছাড়াও, ভিনার স্নিটজল ও জাকার্টর্টের মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখা এবং তাজা খাবার ও রান্নার স্থানীয় বিশেষত্ব উপভোগ করতে নাশমার্কটের মতো বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসও রয়েছে ঘুরে দেখার।
২. কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক:
বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর মধ্যেও একটি ডেনমার্ক। শিক্ষা, অবকাঠামো ও স্থিতিশীলতার জন্য নিখুঁত দেশ ডেনমার্ক। বসবাসের জন্যও কোপেনগেন শহর ইউরোপের অন্যতম একটি শহর হিসেবে বিবেচিত। পরিকল্পিত ও পরিচ্ছন্ন রাস্তা-ঘাট নাগরিকদের জন্য বসবাসের খুবই উপযোগী। কোপেহেগেনের রাস্তায় সাইকেল চলাচল স্বাভাবিক ব্যাপার। গাড়ির পাশাপাশি সাইকেল চলাচল এই শহরকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
৩. মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ ও করোনা মহামারির সময় দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন থাকার ফলে মেলবোর্ন ও সিডনি– এ দুইটি শহরের স্কোর একসময় নিচে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু শহর দুইটি এখন তালিকার সেরা ৫-এ ফিরে এসেছে। শহর দুটির রাঙ্কিং যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ। বিশেষ করে মেলবোর্ন শহর সারাদেশের সংস্কৃতি ও পরিবেশ সূচকে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে। মেলবোর্নে রয়েছে খাবারদাবারের অবিশ্বাস্য সুব্যবস্থা, শিল্পকলা, নানা ধরনের ইভেন্ট ও অ্যাট্রাকশন। সেই সাথে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মতো আন্তর্জাতিক খেলা।
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া:
মেলবোর্নে চলাফেরা করা বেশ সহজ, পুরো শহরে রয়েছে ট্রাম চলাচল ব্যবস্থা, যাতে উঠা-নামা করা খুব সহজ। আর সামান্য একটা পথ গাড়ি চালিয়ে গেলেই রয়েছে মেলবোর্নের বিশ্ববিখ্যাত সমুদ্র সৈকত এবং ওয়াইন প্রস্তুতকারী আঙ্গুরের বাগান। মেলবোর্নে জীবনের স্পন্দন আবিষ্কার করতে হলে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষায়িত রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের স্বাদ পরখ করে দেখতে হবে। সেখানে গোপন দরজার আড়ালে লুকিয়ে আছে ককটেল বার। তবে, সিডনির তুলনায় মেলবোর্নের লোকেরা অনেক বেশি অতিথি পরায়ণ, যা শহরের জীবনযাত্রার মানকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা:
ভ্যাঙ্কুভার, ক্যালগারি ও টরন্টোসহ তিনটি কানাডিয়ান শহর এ বছর বাসযোগ্যতার তালিকায় শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিয়েছে। উন্নত সংস্কৃতি ও পরিবেশের স্কোরের কারণে ভ্যাঙ্কুভার পাঁচ নাম্বারে স্থান পেয়েছে। ভ্যাঙ্কুভার থেকে অরণ্য, সমুদ্রে যাওয়া খুবই সহজ। সৈকত, পাহাড় ও বনের কাছাকাছি থাকার জন্য ভ্যাঙ্কুভারকে শহরের বাসিন্দাদের খুবই পছন্দ।
শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে ২০ মিনিটেরও কম দূরত্বের মধ্যে অসংখ্য পার্ক ও সমুদ্র সৈকত রয়েছে, যা সেখানকার বাসিন্দারা উপভোগ করছেন। সহজ অভিবাসন নীতির সুবাদে নানা দেশের ব্যবসায়ীরাও এখন ভ্যাঙ্কুভারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
/এআই/এমএন
Leave a reply