ইসরায়েলে হামলা: ২ বছর ধরে গোপনে প্রশিক্ষণ নেয় হামাস, রয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি

|

ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলা নিয়ে শুরু থেকেই বিশ্লেষকরা বলে আসছিলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে হামাস। এবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আসল তথ্য। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের খুব ঘনিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, দুই বছর ধরে ইসরায়েলে গেরিলা হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে সংগঠনটি। ইহুদি বসতির আদলে নকল শহর তৈরি করেও হামলার জোরালো প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত এবং যুদ্ধ সরঞ্জামে সুসজ্জিত। সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি আবিষ্কারে শীর্ষে দেশটি। সেই সাথে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। সামরিক সদস্য থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেন, ফিলিস্তিনের সামনে মহিরুহ ইসরায়েলি সেনা বাহিনী। ইসরায়েলের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এত লম্বা সময় ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছে হামাস সেটিই এখন হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়। কারণ হামলার পর দেশটির কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, এই হামলা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না তাদের। তাছাড়া হামাসের কাছে কীভাবে অত্যাধুনিক অস্ত্র আর সামরিক সরঞ্জাম এলো তা নিয়েও চলছে জল্পনা।

ওয়াশিংটন ইনস্টিউটের বিশ্লেষক ম্যাথিউ লেভিড বলেন, হামাস কখনও এভাবে প্রকাশ্যে হামলা করেনি আগে। তারা মূলত গোপনে আত্মঘাতি হামলায় অভ্যস্ত। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা গাজায় নিজেদের ভিত্তি মজবুত করেছে। সেখানে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্রের বিভিন্ন বেস তৈরি করেছে।

ইসরায়েল-মিশর আর ভূমধ্যসাগরের মাঝে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আর ১০ কিলোমিটার প্রস্থের গাজা উপত্যাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার মধ্যেই ইহুদি বসতির আদলে বিভিন্ন গোপন ক্যাম্প তৈরি করে হামলার প্রশিক্ষণ চলেছে হামাস যোদ্ধাদের। মূলত আকস্মিক হামলা, বিভিন্ন চেকপোস্টে ইসরায়েলি সেনাদের হত্যা আর ইসরায়েলিদের আটক করে আনাই ছিল প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য। অত্যন্ত গোপনে চলা এই ট্রেনিং কেনো দেয়া হচ্ছে তা জানতেন না হামাস যোদ্ধারাও। এমন সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের কাছেও গোপন রাখা হয় বিষয়টি।

দীর্ঘ এই সময় ইসরায়েল নিয়মিত চুক্তি ভঙ্গ করলেও তাতে কোনো পাল্টা জবাব দেয়নি হামাস। এমনকি ইসরায়েলের উগ্রপন্থী নেতা বেন গাভির আকসা কম্পাউন্ডে প্রবেশ করলেও তারা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। আর এই নীরবতা নিয়ে সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন ফাতাহ’র নেতারাও। তবে এই নিরবতা যে দূরদৃষ্টিরই অংশ তা প্রকাশ পেলো অভিযানের পর।

ম্যাথিউ লেভিড জানান, ইসরায়েল গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করবে। আর হামাস সেই প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছে। তারাও পাল্টা জবাব দেবে। আর উত্তর অংশে হামলা চালাবে হিজবুল্লাহ। ফলে স্থল যুদ্ধ খুব কঠিন হয়ে উঠবে।

মূলত, সাগরপথে ছোট নৌকা, প্যারাগ্লাইডিং করে আকাশপথে আর গাজা ক্রসিংয়ের সর্বদক্ষিণে কেরেম শালম চেকপোস্ট দিয়ে হয় স্থল অভিযান। হামলার দিন শনিবার ছিল ইহুদিদের উৎসব সাব্বাত। ঘটনার সময় বেশিরভাগ ইসরাইলি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন অথবা উৎসবের আবহে ছিলেন। ফলে খুব সহজেই আকস্মিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীকে ভড়কে দেয় হামাস।

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা হয় হামাস। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই ফিলিস্তিনের বাইরে বসবাস করেন। গাজায় হামাসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কমিটিও।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply