দূষণে গাজীপুরবাসীর গড় আয়ু কমেছে ১৯ মাস

|

আল-আমিন হক অহন:

কয়েক বছর ধরে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটির নির্মাণ কাজ চলায় গাজীপুরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে দূষণ। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার হারও বেড়েছে কয়েকগুণ। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দূষণের কারণে অন্য জেলার চেয়ে গাজীপুরে গড় আয়ু কমেছে ১৯ মাস। দূষণের প্রভাবে শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া সহ শ্বাসতন্ত্রের নানান রোগে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মিলেছে ভয়বাহ তথ্য। তারা বলছে, অন্য জেলার তুলনায় গাজীপুরের মানুষের গড় আয়ু কমছে। দেশের বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের গবেষণাতেও মিলেছে এমন তথ্য। শিল্প-কারখানা এবং বিআরটি নির্মাণ কাজের দূষণ স্বাস্থ্য জটিলতা বাড়িয়েছে।

সন্তান জন্মের দু’মাস পর থেকে শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে অন্তত ৬ বার সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন গাজীপুরের বাসন এলাকার শ্রমিক দম্পত্তি তাসনিম ও মিজানুর। অপরদিকে চৌরাস্তা এলাকার সানজিদার ২১ মাস বয়সের সন্তান জন্মের পর থেকে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়েছে ৩ বার।

গাজীপুরের শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেলের শিশু বিভাগে রোগীর তালিকা ঘেটে দেখা যায়, নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৩৬৮ শিশু। এর ১৫৩ জন ভুগছে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায়। যার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বায়ু দূষণ। গত কয়েক বছর ধরে এই হাসপাতালে বহির্বিভাগে প্রতিদিন কমবেশি দেড় হাজার রোগী আসে। প্রতিটি বেডে একজন করে থাকার কথা থাকলেও রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় রয়েছে দুইজন করে শিশু। যাদের বড় অংশেরই সমস্যা শ্বাসকষ্ট।

এ ব্যাপারে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেখ আনিসুজ্জামান বলেন, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমাসহ শ্বাসযন্ত্রের জটিলতায় যেসব রোগ হয় এসব রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় একদিকে মানুষের গড় আয়ু কমছে অন্যদিকে যারা বেঁচে আছে তাদের সাস্থ্য জটিলতা বাড়ছে।

তবে বিআরটির কাজের জন্য ওই এলাকায় প্রতিদিন একাধিকবার পানি ছিটানোর কথা ছিল। পথচারীদের দাবি, তারা কখনওই পানি ছিটাতে দেখেননি।

এদিকে, কোন জায়গায় কতটুকু পানি ছিটাতে হবে সব নির্দেশনা দেয়া আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে সবাইকে আরও সচেতন হয়ে রাস্তার পাশে বাড়িঘর না করে একটু দূরে বসতবাড়ি স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব প্রকল্প বাস্তবায়নকারীকেই নিতে হবে, এমন মন্তব্য করে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, যেকোনো প্রকল্পে এমন অনিয়ম হওয়া মানে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা। এতে যেকোনো একজন সুবিধাভোগী হতে পারে। তবে জনগণের ভুক্তভোগী হওয়ার ব্যাপারটি স্পষ্ট।

তবে ছোট ছোট কিছু উদ্যোগ নিলেই বাড়বে বায়ুর মান ভালো হবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে শিশু-বৃদ্ধ সবার এমনটাই মনে করছেন সবাই।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply