ফাতেমা রাহিমাভিয়ান ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি ফটোগ্রাফার। গত শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) গিয়েছিলেন একটি সেনা কুচকাওয়াজ কভার করতে। তখনও অনুষ্ঠান ঠিকঠাকই চলছিল। এরইমধ্যে হঠাৎ গর্জে ওঠে কুচকাওয়াজস্থল। অত্যাধুনিক রাইফেলের গুলির আওয়াজ।
মুহুর্তেই সেই গুলি লক্ষ্যভেদ করে অনুষ্ঠান মঞ্চে থাকা অনেকের দিকে। এলোপাতাড়ি গুলি খেয়ে ধপাস ধপাস করে মাটি পড়তে থাকে মানুষের দেহ। চারিদিকে নরকের পরিবেশ। সবােই ছুটছে যে যার মতো। গুলির শব্দের সাথে মিশে যাচ্ছে চিৎকার, কান্না, আহাজারি।
এমন অবস্থায় ফাতেমাও দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন পাশের এক দেয়ালের কাছে। উপুড় হয়ে শুয়েন পড়েন মাটিতে। কিন্তু তার হাতে তো ক্যামেরা। তিনি একজন ফটোসাংবাদিক। তাকে এই সংকটের সময় এভাবে তাকে শুয়ে থাকলে চলবে কেন! ভয়াবহ মুহুর্তগুলো যে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে তার সামনে থেকে। মাটিতে শুয়ে থেকেই ক্যামেরা নিয়ে সক্রিয় হলেন ফাতেমা। তুলতে থাকলেন একের পর এক ছবি।
পরে তার তোলা সেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে বিদেশি অনেক সংবাদমাধ্যমে। ঘটনাস্থলে ছিলেন আরও অনেক ফটোগ্রাফার। তাদের কেউ একজনের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ফাতেমার শুয়ে শুয়ে ছবি তোলার দৃশ্য। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাটিতে শুয়ে থাকা অবস্থায় একজন বয়স্কা নারী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। আর ফাতেমা তুলে যাচ্ছেন সামনের ছবি।
গত তিন দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। চরম দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তেও নিষ্ঠা ও সাহসের সাথে বোরকা পরা এক নারীর নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার দৃশ্যটি সবাইকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘অসাধারণ সাহসী এক নারী। পৃথিবীজুড়ে সাংবাদিকদের কাজকে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয় না।’ ওই সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ফাতেমা বলেন, ‘ভয়াবহ দৃশ্য। আমি আসলে বলে বুঝাতে পারবো না তা কেমন ছিল।’
নিজের ছবি ভাইরাল হওয়া নিয়ে তার মন্তব্য, ‘আসলে কী বলবো বুঝতে পারছি না। ওই সময়টাতে আমি ভয়ডরহীন হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের কাছে মনে হয়নি আমি একজন নারী নাকি পুরুষ।’
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, নিউ এরাব।
Leave a reply