টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে কখনো জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সিলেটে সেই আক্ষেপও শেষ হলো টাইগারদের। তাইজুল ইসলামের স্পিন বিষে নীল হয়ে মাত্র ১৮১ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। কিউইদের বিপক্ষে ১৫০ রানের জয় তুলে নেয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ফলে দুর্দান্ত এক জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করলো বাংলাদেশ।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পঞ্চম দিনে নামে দু’দল। আগের দিনে ৭ উইকেটে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ১১৩। ২১৯ রানে পিছিয়ে, হাতে বাকি কেবল ৩ উইকেট। আজ সকালের প্রথম প্রথম ৩০ মিনিট অবশ্য দারুণভাবে কাটিয়ে দেন ড্যারিল মিচেল, ইশ সোধি জুটি। পঞ্চাশ হাঁকিয়ে ছুটে চলা ড্যারিল মিচেল অবশ্য থামেন ব্যক্তিগত ৫৮ রানে। নাইম হাসানের বলে তাইজুল ইসলাম দৌড়ে এসে লুফে নেন দারুণ এক ক্যাচ। আর তাতেই ভাঙে মিচেলের প্রতিরোধ।
২৪ বলে ৩৪ করে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো কিউই অধিনায়ক টিম সাউদিকে ইনিংস লম্বা করতে দেননি তাইজুল ইসলাম। তাকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করলেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২ তম ফাইফার। সাদা পোশাকে তাইজুল ইসলাম ‘দুঃসময়ের কাণ্ডারি’। সাকিব আল হাসান নেই, তাই স্পিনে নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে তাইজুলকেই। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর খাদের কিনারায় থাকা দলকে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন তাইজুল। শেষ ব্যাটার ইশ সোধিকে ফিরিয়ে তাইজুল দখলে নেন নিজের ১০ উইকেট। সেই সাথে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট ম্যাচে ১০ উইকেট পেলেন তাইজুল ইসলাম। আর তাতেই বাংলাদেশের ১৫০ রানের বড় জয়।
এর আগে, বাংলাদেশের দেয়া ৩৩২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কিউই শিবিরে আঘাত হানেন পেসার শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসারের লেন্থ ডেলিভারি বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছুঁয়ে যায় লাথামের ব্যাট। নুরুল হাসান সোহান সহজ ক্যাচ নিলে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারায় সফরকারীরা।
ক্রিজে আসেন ড্যাঞ্জারম্যান কেন উইলিয়ামসন। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে উইলিয়ামসনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের অফ এবং মিডল স্টাম্পের উপর করা টসড আপ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করলেও বলের লাইনে যেতে পারেননি উইলিয়ামসন। বল প্যাডে আঘাত হানতেই জোরালো আবেদন করে বাংলাদেশ, আম্পায়ারও আঙুল তুলে দেন। রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি ১১ রান করা উইলিয়ামসনের।
কেন উইলিয়ামসন ফেরার পর হেনরি নিকোলসকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ডানহাতি এই অফ স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন নিকোলস। তবে টপ এজ হয়ে বল সরাসরি চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা নাঈম হাসান ক্যাচ নিয়েছেন অনায়াসে। নিকোলসকে ফিরতে হয় ২ রানে।
উইকেটে থিতু হলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে উইকেট দিয়ে ফিরতে হয়েছে ওপেনার ডেভন কনওয়েকেও। তাইজুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরের লেন্থ ডেলিভারিতে একটু এগিয়ে এসে সামনের পায়ে ভর দিয়ে মিড অফের দিকে ব্লক করতে চেয়েছিলেন। তবে বল ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগে শর্ট লেগে থাকা শাহাদাত হোসেন দিপুর হাতে চলে যায়। দিপু অনায়াসে ক্যাচ নিলে ফিরতে হয় ৭৬ বলে ২২ রান করা কনওয়েকে।
ক্রিজে এসে ইনিংস ব্র করতে পারেননি কিউই উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম ব্লান্ডেলও। তাইজুলের লেন্থ ডেলিভারিতে পড়ে টার্ন এবং লাফিয়ে উঠা বল নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্লান্ডেলের ব্যাট ছুঁয়ে যায়। জোরালো আবেদন করতেই আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। মাত্র ৬ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্লান্ডেল। তাতে করে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে কিউইরা।
দিনের শেষ বেলায় গ্লেন ফিলিপসকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান স্পিনার নাইম হাসান। যদিও শুরুতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত রিভিউ নিলে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিডল স্টাম্পে ইমপ্যাক্ট ও লেগ স্টাম্পে হিটিং হয়েছে। ফলে ১২ রান করে সাজঘরে ফেরেন ফিলিপস।এরপর কাইল জেমিসনকে এলবিডব্লিউ করে দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের চতুর্থ উইকেটের দেখা পান তাইজুল। তবে কিউইদের হয়ে একাই লড়ে গেছেন মিচেল। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৩১০/১০ (৮৫.১ ওভার) (জয় ৮৬, জাকির ১২, মোমিনুল ৩৭, মুশফিক ১২, মিরাজ ২০, দিপু ২৪, সোহান ২৯; ফিলিপস ৪/৫৩)
নিউজিল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)- ৩১৭/১০ (১০১.৫ ওভার) (লাথাম ২১, কনওয়ে ১২, উইলিয়ামসন ১০৪, নিকোলস ১৯, মিচেল ৪১, ফিলিপস ৪২, সাউদি ৩৫, জেমিসন ২৩; তাইজুল ৪/১০৯, মোমিনুল ৩/৪)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ৩৩৮/১০ (১০০.৪ ওভার) (জাকির ১৭, জয় ৮, শান্ত ১০৫, মোমিনুল ৪০, মুশফিক ৬৭, দিপু ১৮, মিরাজ ৫০*, সোহান ১০; এজাজ ১৪৮/৪)
নিউজিল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস, লক্ষ্য- ৩৩২ রান)- ১৮১/১০ (৭১.১ ওভার) (কনওয়ে ২২, উইলিয়ামসন ১১, মিচেল ৫৮; তাইজুল ৬/৭৫)
/আরআইএম
Leave a reply