কাদের পলাশ, চাঁদপুর:
পীরের আদেশ মেনে স্বাধীনতার পর থেকে কখনও ভোটকেন্দ্রে যাননি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা। তবে এবার এই প্রথা ভাঙবে বলে আশা প্রকাশ করছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। বলছেন, এবার নারীদের ভোট কেন্দ্রে আনতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দু-একটি কেন্দ্রে নামমাত্র ভোট দিয়েছিলেন নারীরা। যা মোট ভোটারের ২-৩ ভাগ। তবে এই এলাকার মোট ভোটার ২৪ হাজার ৪৫৪জন, যার অর্ধেকই নারী।
অর্থাৎ প্রথার দোহাই দিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীরাই ভয়ে আসছেন না ভোটকেন্দ্রে। ভোট না দেয়ার তালিকায় মুসলিম ছাড়াও রয়েছেন সনাতন ও খ্রিষ্টানসহ অন্য ধর্মের নারীরাও।
তবে ভোট না দিলেও সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ঠিকই পাচ্ছেন নারীরা। পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ হোসেন, সকল সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করছে। এগুলো যদি সব তাদের জন্য হালাল হয় তাহলে ভোট তাদের জন্য কীভাবে হারাম হলো? এজন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যেন সবাই কেন্দ্রমুখী হয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যার যার ভোট প্রদান করেন।
ভোট না দেয়ার বিষয়ে এই এলাকার নারীরা বলছেন, হুজুরে নিষেধ করে গেছেন তাদেরকে ভোট দিতে। হুজুরের দোয়ায় তারা বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। এ সময় তারা আরও বলেন, তাদের দাদী-নানীরা ভোট দেননি কখনো। সে অনুযায়ী তারাও এখন ভোট দিতে চাননা।
কথিত আছে, ১৯৬৯ সালে ভারতের জৈনপুর থেকে হাসনে মওদুদ নামে এক পীরের আগমন ঘটে এই এলাকায়। মহামারি থেকে বাঁচতে নারীদের নির্দেশ দেন পর্দার পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে না যেতে। যদিও আলেম-ওলামারা বলছেন, ইসলামে এমন কোন বিধিনিষেধ নেই।
ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এইচএম আনোয়ার বলেন, যথাযথ পর্দা মেনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য ইসলামে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোট দেয়া অপরিহার্য।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের ভোটকেন্দ্রে আনতে ইতোমধ্যে উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। নারীদের ভোটের এ বিষয়ে চাঁদপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের ভোটকেন্দ্রে আনার চেষ্টা চলছে। কারণ এখানের অর্ধেক ভোটারই নারী। তাই সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এটা তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা চলছে।
/এমএইচ
Leave a reply