দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহে বাড়ছে হত্যা-আত্মহত্যা, বলি হচ্ছে শিশুরাও

|

ছবি: প্রতিকী

ওবায়দুর রহমান:

আর্থিক সংকট, দাম্পত্য কলহসহ পারিবারিক নানা জটিলতায় বাড়ছে হত্যা-আত্মহত্যার ঘটনা। যার বলি হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরাও। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন কিছু ঘটনায় বাড়ছে উদ্বেগ। পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার তাগিদ দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সচেতন মহল।

সম্প্রতি নীলফামারীতে দুই সন্তানসহ মায়ের মরদেহ উদ্ধার হয়। গুরুতর অবস্থায় পাওয়া যায় বাবাকেও। পুলিশের ধারণা, স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ওই বাবা। তার আগে, খুলনা-গোপালগঞ্জে উদ্ধার করা হয় শিশু সন্তানসহ মায়ের মরদেহ। কুষ্টিয়ায় ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায় বাবা-ছেলের। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বলা হচ্ছে, সন্তানদের হত্যা করার পর আত্মহত্যা করেন তারা। যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পাররিবারিক শিক্ষা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাবের কারণে এমনটি হচ্ছে। প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ফোনের অপব্যবহার বন্ধেরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

তবে পুলিশ বলছে, এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে দাম্পত্য কলহ। এর সাথে আর্থিক সংকট, পারিবারিক নানা জটিলতাও দায়ি। যার বলি হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুও।

এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী বাইরে কাজে থাকে আর নারীরা সন্তান নিয়ে বাসায় থাকেন। যেসব নারী কর্মজীবী না তারা বাড়ি থেকে খুবই কম বের হন। এ কারণে তারা অনেক সময় একাকিত্ব ও বিষণ্নতায় ভোগেন।

এসব পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কাটাতে হবে। আগে বাচ্চারা মাঠে গিয়ে খেলতো। মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতো। যাত্রাপালা, লাঠিখেলাসহ নানা বিনোদন মাধ্যম ছিল। এসব জায়গায় গেলে মানুষ কিছু সময়ের জন্য তার দুঃখ-বেদনা ভুলে থাকে। বিনোদন পায়, বন্ধুদের সঙ্গে নিজের সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারে। তবে এগুলো দিন দিন কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়ছে। একাকিত্ব ও বিষণ্নতা কাটাতে সুস্থ্য বিনোদনে সময় দিতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

সচেতন নাগরিক কমিটি’র (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, এই অসুস্থ সমাজে সবাই অসুস্থ চিন্তা করে। কারো সাথে কারোর ভালো সম্পর্ক থাকুক এটি অনেকেই চায় না। তারা মানুষের খারাপ বিষয়গুলোকে আরও উস্কে দেয়। এমন মানসিকতা বদলাতে হবে।

যাপিত জীবনে সব মানুষের নানা সংকট-বাধা-হতাশা রয়েছে। তবে এসবের সমাধানও আছে। সেজন্য ধৈর্য্য-বিশ্বাস থাকতে হবে। সম্পর্কের জটিলতা কাটাতে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে বলেন এই আইনজীবী।

অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, রাষ্ট্র এক ধরনের দায়িত্ব নিতে পারে। উন্নত বিশ্বে দেখা যায়, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক হচ্ছে। সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং মানুষের উত্তেজনা ও উগ্রতা কমানোর কী কী উপায় থাকতে পারে সুন্দর সুন্দর গল্প শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে রেখে এগুলো কিন্তু নিরসন করা যায়। তবে সেটি শিক্ষাব্যবস্থায় উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply