সুদানের গৃহযুদ্ধের কারণে গত দশ মাস ধরে হাজার হাজার মানুষ দেশটির দক্ষিণে সীমান্তবর্তী একটি শহর রেঙ্কে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে রেঙ্কের শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। প্রতিদিন প্রচুর মানুষের আগমনের কারণে, শরণার্থী শিবিরের দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫ লাখ ৪১ হাজারের বেশি মানুষ রেঙ্কের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর শুধু ডিসেম্বরের হিসাব বলছে, মোট ৭১ হাজার ৭৫৭ জনের নিবন্ধন করেছে, যা গত বছরের যে কোনও মাস থেকে নতুন শরণার্থী আগমনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ সুদানী এবং ৮১ শতাংশ দক্ষিণ সুদানী। ২০১৩ ও ২০২০ সালের মধ্যে, যখন দেশটি গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়, তখন যুদ্ধের ভয়াবহতা বিবেচনা করে দক্ষিণ সুদানও ত্যাগ করা শুরু করে দেশটির নাগরিকরা। সুদানে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স এবং সুদানী সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয় হাজারো সুদানিজ।
এদিকে, রেঙ্কের শরণার্থী শিবিরগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন প্রচুর মানুষের আগমনের কারণে, শরণার্থী শিবির উপচে পড়া ভিড়। ট্রানজিট সেন্টারটি শুধুমাত্র ৪ হাজার মানুষকে হোস্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তবে, সেটি এখন ২৩ হাজার মানুষের বেশি সুদানিজদের আশ্রয় দেয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল। কমপক্ষে ২শ’ জন মানুষ একটি ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে। ফলে কলেরা, হাম এবং গুরুতর রোগের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
এইড এজেন্সিগুলো অল্প খাবার ও জল দিয়ে হাজারো মানুষের চাহিদা মেটাতে লড়াই করছে। যুদ্ধবিপর্যস্ত এলাকা থেকে পালিয়ে, কয়েক দিন হাঁটার পরে ক্লান্ত এবং আঘাতপ্রাপ্ত পরিবারের মানুষগুলো ট্রানজিট সেন্টারে পৌঁছালেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজন আরও আশ্রয়কেন্দ্র ও ওষুধ সরবরাহের।
১৩ বছর বয়সী নিয়াসেবিট যুদ্ধ শুরু হলে খার্তুম ছেড়ে চলে যান। তার মা সশস্ত্র সংঘর্ষে নিহত হন। তাকে তার ছোট দুই ভাইকে রেঙ্কে নিয়ে যেতে হয়। নিয়াসেবিট বলেন, খার্তুম থেকে রেঙ্কে পৌঁছাতে সাত দিন লেগেছিল। এটা খুবই বেদনাদায়ক ছিল এবং আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলাম। একটি ভাইয়ের জুতা ছিল না এবং ছোট ভাইকে বহন করতে হয়েছিল।
দাতব্য সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, রেঙ্কে আসা অভিভাবকহীন শিশু ও কিশোরী মেয়েদের সংখ্যা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে, এই গোষ্ঠীগুলো যৌন শোষণ এবং নির্যাতনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে৷
\এআই/
Leave a reply