জোট সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। চব্বিশে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠা না পেলে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসে দুই দলই। তাতে দেশটির আগামী সরকার গঠন নিয়ে রাজি হয় পিএমএল-এন ও পিপিপি।
যদিও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর খান এখনও সম্ভাবনা দেখছেন তাদের সরকার গঠনের বিষয়ে। তিনি বলছেন, এককভাবে আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ রয়েছে, তাই জোট গঠনের কোনো পরিকল্পনা নেই। পিএমএল-এন অথবা পিপিপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগও হয়নি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫১ আসনের মধ্যে ৯১টিতে জয় পেয়েছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিএমএল-এন পেয়েছে ৭১টি আসন। পিপিপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছে ৫৪টি আসনে। আর ৩৩ আসনে অন্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। এরমধ্যে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট ১৭টি আসনে জয় পেয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন। তার মধ্যে ৭০টি আসন নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ২৬৬টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৮ ফেব্রুয়ারির ভোটে এখনও ১৫টি আসনে ফলাফল ঘোষণা বাকি রয়েছে। তবে এর আগেই স্পষ্ট হয়ে যায়, কেউ এককভাবে ক্ষমতায় যাচ্ছে না দেশটিতে।
যদিও ভোটের আগে থেকে বিশ্লেষকরা বলছিলেন, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পারে পিএমএল-এন। আর পিটিআই নেতাদের ভরাডুবি হবে। ক্ষমতা হারিয়ে জেলে যান ইমরান খান। কারাদণ্ডিত হয়ে ভোটেও অংশ নিতে পারেননি। তার দলও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। তবে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ে চমক দেখান।
গতকাল শুক্রবার পিটিআই বলেছিল, তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা ১৫০টি মতো আসনে জয় পাবেন। আর স্পষ্ট ঘোষণা দেয়, পিপিপির সাথে জোট করে তারা ক্ষমতায় যাবে না। তবে তারা যখন এমন ঘোষণা দেয়, তখন মাত্র দেড়শটি আসনের ফলাফল জানা গিয়েছিল। এরমধ্যে পিএমএল-এন সরকার গঠনে তোড়জোর শুরু করে দেয়। জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করার কথা জানায়। পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো এবং কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারির সাথে বৈঠকে বসেন পিএমএল-এন সভাপতি শেহবাজ শরিফ। তাতে তারা আবারও একসাথে হাঁটার কথা জানায়।
এর মধ্য দিয়ে ইমরান খানকে হটাতে পুরনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শরিফ পরিবারের সাথে আবারও জোট বাঁধছেন ভুট্টো পরিবারের উত্তরসূরীরা। তা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, বাইশের ১০ এপ্রিলের কথা। এর আগে, ক্ষমতা থেকে ইমরান খানকে সরিয়ে দিতে এক হয়েছিলেন শেহবাজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো। ওই বছরের ৯ এপ্রিল পাকিস্তানের সংসদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটি হয়। দিবাগত রাতে ঘোষণা আসে, দেশটির ১৭৪ জন সংসদ সদস্য ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দিয়েছেন। তাতে তার পতন হয়। যদিও তাকে সরানোর বিষয়ে মূল অভিযোগের তীর দেশটির সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে।
ইমরান খানকে অভিশংসনের পর সংসদে দেয়া বক্তব্যে শেহবাজ শরিফ বলেছিলেন, আজ এক নতুন ভোর ও নয়া দিনের শুরু হয়েছে। অপরদিকে বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, পাকিস্তান আবারও পুরোনো দিনে ফিরে গেছে।
ইমরান খানকে হটাতে তাদের সেই ঐক্যের আবারও দেখা মিললো দেশটির এবারের নির্বাচনের পর। যদিও দুই দল ভোটের প্রচারণায় নেমে একে অপরকে বিষেদাগার করেছিল।
এদিকে, পিএমএল-এন ও পিপিপি যখন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়, তখন ফল ঘোষণা প্রায় শেষের দিকে। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পিএমএল-এন ও পিপিপি একজোট হলে নিজেদের বাইরের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ছোট দলগুলোকে নিয়ে জোট করেও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না পিটিআই এর। এছাড়া, পিএমএল-এন থেকে জানানো হয়েছে, সরকার গঠনের বিষয়ে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথেও বৈঠক করার বিষয়ে।
পাকিস্তানে সরকার গঠনে সংরক্ষিত মিলে দরকার পড়ে ১৭২টি আসনের। তাই আগামীতে পিএমএল-এন ও পিপিপি সরকার গঠন করলেও শঙ্কার চিহ্ন থেকে যাচ্ছে। কেননা, দেশটির ‘অনিশ্চিত’ রাজনীতিতে সংসদে জোট সরকার ও বিরোধী দলের ব্যবধান থাকছে কম। তাই জোট সরকারে থাকা কোনো দল বা তাদের কিছু সংখ্যক সংসদ সদস্য বিরোধীদের সাথে আঁতাত করলে দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী ফের অভিশংসনের মুখে পড়বে।
নির্বাচনের ফল, জোট সরকার গঠনের পাশাপাশি দেশটির এবারের নির্বাচনে আলোচনায় ফলাফল ঘোষণা নিয়ে। ভোটগ্রহণের ৪৫ ঘণ্টা পরও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। দেরি হওয়ার জন্য মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ করাকে দায়ী করেছে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তবে, ভোটের ফল পাল্টে দিতে দেরিতে ঘোষণা আসছে বলে অভিযোগ তুলেছে পিটিআই। যেটিকে নজিরবিহীন বলে আখ্যাও দিয়েছেন দলটির মুখপাত্র রউফ হাসান।
এআই/এমএন
Leave a reply