রামিজ আহসান, মেহেরপুর:
সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন মেহেরপুরের শতাধিক যুবক। ভালো কাজের কথা বলে তাদেরকে বিদেশ পাঠায় দালালরা। তবে কয়েক মাস পেরুলেও মেলেনি কাজ। দেয়া হচ্ছে না খাবার, পানির মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ। এতে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। আর স্বচ্ছলতার স্বপ্নে সহায়-সম্বল বিক্রি করে বিদেশে পাঠিয়ে এখন নিঃস্ব তাদের পরিবারও। মালয়েশিয়ায় ভুক্তভোগীদের মানবতের জীবন কাটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর, গা ঢাকা দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির লোকজন ও দালালরা।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে যমুনা টেলিভিশনের। মেহেরপুরের গাংনীর এক যুবক জানান, সংসারের হাল ধরতে মাস চারেক আগে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। এর কিছুদিন পরই বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এখন অনাহারে-অর্ধাহারে ঘরবন্দি অবস্থায় প্রতিটি দিন পার করছেন এই তরুণ।
তার মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন জেলাটির আরও শতাধিক যুবক। যাদের বেশিরভাগের বাড়ি কাজিপুর ইউনিয়নে। ভুক্তভোগীরা জানান, মোটা বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে দালালরা সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে তাদের মালয়েশিয়া পাঠায়। কিন্তু কয়েক মাস পেরুলেও কাজের অনুমতিপত্র মেলেনি তাদের। যে কোম্পানিতে কাজ দেয়ার কথা বলা হয়েছিল- ক’দিন পর জানতে পারেন সেই কোম্পানিও ভুয়া। কোম্পানির নেই কোনো অস্তিত্ব।
এ বিষয়ে এক ভুক্তভোগী মোবাইলে যমুনা টেলিভিশনকে বলেন, এজেন্সি বলেছিল- কোম্পানি ভালো। তোমাদের ৫ লাখ টাকা লাগবে। পরে সেই টাকা দিয়েছি। আমাদেরকে পাঠিয়েছে, এসে দেখি কোনোকিছুই ঠিক নেই। কোম্পানির কোনো হদিস নেই। আমাদেরকে মানবপাচারের মতো করে নিয়ে এসে রাখছে।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, আসার পর বলেছিল- এক সপ্তাহ পর কাজ দেবে। এরপর শুধু নতুন নতুন তারিখ বলে কাজ দেয়ার কিন্তু কাজ দেয় না। তিনমাস হয়ে গেছে। দালালকে ফোন করলে বলে- এমন করলে ছয়মাস-একবছর কাজ পাবি না। আমরা খাবার পাচ্ছি না, পানিও পাই না। গোসল করার পানি নেই। পানি খেতে হলেও কিনে খেতে হচ্ছে।
প্রতারিত যুবকদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। অনেকেই জমি বিক্রি কিংবা ধারদেনা করে সন্তানকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। এখন সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তার সাথে দেনার দুশ্চিন্তাও যুক্ত হয়েছে তাদের।
ভুক্তভোগী এক যুবকের মা বলেন, কিস্তির টাকা তুলে, বাড়ির জায়গা বিক্রি করে ছেলেকে পাঠিয়েছি। আজ তিনমাস খাওয়া নেই, কাজ নেই। কত কষ্টে তারা দিন কাটাচ্ছে। আরেকজন বলেন, কিস্তির টাকার জন্য পাওনাদাররা এসে নিয়মিত টাকা চাচ্ছে। তারা তো আমাদের দুর্ভোগ বোঝে না।
ভুক্তভোগীদের ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গা ঢাকা দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির লোকজন ও দালালরা। ৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল আহসান বলেন, তদন্তের মাধ্যমে কারা কারা পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করবো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
/এনকে
Leave a reply