‘হয়তো এ দেহ থাকবে না,
ভেবো তোমার নিশ্বাসে বেঁচে আছি
আমার স্পর্শ কি তুমি অনুভব করবে না?…’
অনুভব না করার সুযোগ নেই। হৃদয়ের অন্তঃস্থলে ভালোবাসার যে জায়গায় আছেন আইয়ুব বাচ্চু, তা অস্বীকার করার সাধ্য কার? বোধকরি কারো নেই। কেন নেই, এমন প্রশ্নও বোধহয় অবান্তর।
একটি প্রজন্ম বাচ্চুর গান শুনে বড় হয়েছে। কে জানে, কত তরুণ-তরুণি তার গান শুনে তারা ভরা রাতে বলেছে মনের কথা? কষ্ট পেয়েছে, তবে ভালোবাসার গান শুনে বারবার ছুটে গেছে সেই মনের মানুষটির কাছে। হয়েছে এমন। এ কথা হলফ করেই বলা যায়।
একটি প্রজন্ম বড় হয়েছে বাচ্চুকে অনুসরণ করে। মিউজিক ভালোবাসে, অথচ এবি’র গিটার শুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়নি, এমন কারো বেলায় হয়েছে বলে শুনিনি। দেশের বাঘা বাঘা খ্যাতিমান কত মিউজিশিয়ানও তো অপেক্ষায় থাকতেন, যদি বাচ্চু ভাই একটু দেখিয়ে দিতেন!
নতুন প্রজন্মকে নিয়ে সবসময় ভাবতেন বাচ্চু। তার লক্ষ্যই ছিল উঠতি বয়সী মিউজিশিয়ানদের নিয়ে কাজ করা। তরুণদেরও ভরসার জায়গা ছিলেন এবি। প্রথমে ক্ল্যাপটন শুনবেন নাকি সান্টানা, এমন পরামর্শ নিতে গেলেও ফেরাতেন না কাউকে। ক’দিন আগেও এক সাক্ষাতকারে বলছিলেন, ‘ইয়াংদের নিয়ে নতুন কিছু পরিকল্পনা আছে, কাজ শুরু করেছি..’। অনেকেই তো নতুনদের নানা সমালোচনা করেন। কখনও আইয়ুব বাচ্চু সেই দলে গা ভাসিয়েছেন বলে শোনেনি কেউ। সবসময়ই বলেছেন, ‘ওরা তো খুব ভালো করছে। জাস্ট একটু পথটা দেখিয়ে দিতে হবে…’।
নতুন প্রজন্মকে নিয়ে এভাবে ভাববার সময় তো হয় না সবার। বাচ্চু’র সে সময় হতো। শুধু সময়ই হতো না, যতদূর জানি নতুনদের নিয়ে ব্যতিক্রমী কিছু করার পরিকল্পনা ছিল তার। যা অনেকটা গুছিয়েও এনেছিলেন তিনি।
আইয়ুব বাচ্চু যে অনেকের কাছে অনুকরণীয়-অনুসরণীয়, নি:সন্দেহে বলা যায় তা। কতটা বিনয়ী হওয়া যায়, একজন সেলিব্রেটির আচার-আচরণ কতটা সাবলীল হতে পারে, উঠতি অনেক খ্যাতিমানও তা অনুসরণ করেন। ব্যক্তিগত আড্ডায় এমন একাধিক জনের কাছে শুনেছি। যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন মঞ্চ কাঁপানো রকস্টারকে, তারাই বলেন, ‘এটা বাচ্চু ভাইয়ের পক্ষেই সম্ভব’। রবীঠাকুরের সুর যেন সবসময়ই উচ্চারিত হতো এবি’র কণ্ঠে।
‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার
চরণধুলার তলে।
সকল অহংকার হে আমার
ডুবাও চোখের জলে।’
বরাবরই একটা ছেলেমানুষি ছিল এবি’র ভেতরে। সেদিনই এক সাক্ষাতকারে অভিনেতা আফজাল হোসেন বলছিলেন, ‘ওর (বাচ্চুর) ভেতর একটা ছোট মানুষ আছে। খুব ভালোবাসার কাঙাল সে।’ প্রতিত্তোরে বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আফজাল ভাই, দেখে রাখবেন আমাকে। আপনারা ছাড়া আমার তো কেউ নেই আর…’। আসলেই তো, ভালোবাসার কাঙাল ছিলেন তিনি। না হলে অন ক্যামেরায় মনের কথা কে বলে এত সহজ করে?
গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী তার লেখা ও আইয়ুব বাচ্চুর সুর করা অপ্রকাশিত একটি গানের ক’টি লাইন লিখেছেন ফেসবুকে।
‘না হয় যাচ্ছি ফিরে
সব পাখি ফেরে নীড়ে
ফিরবো বলেই একদিন
নির্জনতার কাছে যাচ্ছি দিয়ে শোধ
তোমাদের সবটুকু ঋণ
গান শেষে বন্ধু যেন চোখে না আসে জল
মৌনতাকে ভালোবেসে বন্ধু এখন
চল বাড়ি চল।। ’
সবারই নীড়ে ফেরার তাড়া থাকে। আইয়ুব বাচ্চুরও হয়তো ছিল। তবে, ফেরাটা কি একটু তাড়াতাড়িই হলো না? অসময়ে? হাজারো তরুণ যে এখনও তাকিয়ে আছে আপনার দিকে।
লেখক : মুরশিদুজ্জামান হিমু
সাংবাদিক
Leave a reply