ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একাধিকবার ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে ইউরোপের একটি দেশকে। সেই দেশটির নাম আয়ারল্যান্ড। এমনকি তারা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তবে কী কারনে ইউরোপের এই দেশটি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এতটা সোচ্চার, তার অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে।
গত বুধবার (২৭ মার্চ) এক বক্তৃতায় আইরিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেছেন, ইসরায়েলে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ দুটিই বড় আকারে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি এই ভূখণ্ডে শান্তির বার্তা দিতে চান, যুদ্ধ বন্ধ দেখতে চান।
আসুন দেখে নেই কয়েকটি বড় কারণ, যেখানে ফিলিস্তিনিদের সাথে আইরিশদের ঐতিহাসিক এবং মানবিক মেলবন্ধন রয়েছে। যেগুলো থেকেই ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের এই ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা দেখা যায়।
আইরিশরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে তাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেছিল। এটি ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগনের সাথে নিজেদের অতীতকেই আয়নায় দেখার মত মনে হয় তাদের কাছে। জাতিগত ও রাজনৈতিক ঘটনায় দেশ দুটি একই অভিজ্ঞতায় সম্পর্কযুক্ত। এমনকি তারা যখন ব্রিটিশ উপনিবেশ যুগে ছিল সেসময়ের অভিজ্ঞতাকে তারা গত ৫০ বছরের ফিলিস্তিনিদের সাথে মেলাতে পারে।
তবে আইরিশরা বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে ইতিবাচক আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন সিটি কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপলক্ষ ছিল ৫০ বছর ধরে চলা ফিলিস্তিনের জনসাধারণের নিপীড়িত হবার ঘটনায় একাত্বতা প্রকাশ করা। সেটি করতে গিয়ে ভোটের আয়োজন করা হয়। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট আসে এই মর্মে যে, সিটি হলের ছাদে মাসব্যাপী ফিলিস্তিনের পতাকা থাকবে।
২০১8 সালে আয়ারল্যান্ডের একজন সিনেটর দেশটির পার্লামেন্টে একটি বিল পাসের আবেদন জানায়। যেটি ছিল সবধরনের ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করা। এর কারণ ছিল ফিলিস্তিনের ওয়েস্ট ব্যাংকে ইসরায়েলের সন্ত্রাসী কাজের বিরোধীতার একটি নীরব প্রতিবাদ। ২০১৯ সালে দেশটির আইনপ্রণেতারা সেই বিলটি পাস করতে ভোটও দেয়। যদিও বিলটি চুড়ান্তভাবে অধ্যাদেশে পরিণত হয়নি।
২০১০ সালে ৩১ মে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ প্রথম এসেছিল আয়ারল্যান্ড থেকে। ৫ জুন সকালে গাজা অবরোধ লঙ্ঘনের প্রচেষ্টায় আয়ারল্যান্ডের পূর্ব উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি রাচেল কোরি নামের একটি জাহাজ। সেটিকে বাধা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। জাহাজের আইরিশ যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মাইরেড ম্যাগুয়ার।
আইরিশ প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের (আইপিএসসি) নেতা জো ললোর বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে আয়ারল্যান্ডের গভীর সহানুভূতি ও একাত্মতা রয়েছে। সেই সংহতি একটি আগ্রাসনকারী রাষ্ট্র দ্বারা পরাধীনতার অভিজ্ঞতা অনুভূতি থেকে জন্ম নিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগকৃত লিও ভারাদকার এই মাসে হোয়াইট হাউসে সেন্ট প্যাট্রিক দিবস স্মরণে এক সভায় বলেন, নেতারা প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে কেন আইরিশদের ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি এত সহানুভূতি রয়েছে। আমার উত্তর খুবই সহজ। আমরা ফিলিস্তিনিদের চোখে আমাদের ইতিহাস দেখি। বাস্তচ্যুতি, ক্ষমতাচ্যুতি, জাতীয় পরিচয় প্রশ্নবিদ্ধ বা অস্বীকার, দেশত্যাগে বাধ্য, বৈষম্য এবং এখন ক্ষুধার একটি গল্প। এই গল্প আমাদের, এই গল্প ফিলিস্তিনের এবং আইরিশ উভয়ের।
উল্লেখ্য, নিজেদের ইতিহাস ও আগের প্রজন্মকে ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রজন্মের সাথে সমান্তরালে মিল পেয়েছে উত্তর ইউরোপের দেশটি। আর সেখান থেকেই আইরিশদের এই অনুভূতি ও ভালোবাসা।
/এমএইচআর
Leave a reply