শরিফুল ইসলাম খান:
মার্কিন অবরোধসহ আন্তর্জাতিক নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ইব্রাহিম রইসির নেতৃত্বে দাপট টিকিয়ে রাখে ইরানিরা। প্রভাব বিস্তার করেছে মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় তিনি চলে গেলেন।
রইসির মৃত্যুতে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট সৃষ্টি হবে। অস্থিরতা বাড়বে ইরানের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে। এমনকি অস্থিতিশীলতা ছড়াতে পারে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। এছাড়া, ইরানে সংঘাত-সহিংসতা হতে পরে কট্টরপন্থীদের সঙ্গে মধ্যপন্থী সমর্থকদের, এমনটা মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির বলেন, রইসির মৃত্যৃ ইরানের জন্য বড় জটিলতা তৈরি করলো। আঞ্চলিক একটা অনিশ্চিয়তা তৈরি করলো। ইরানের অভ্যন্তরীণ জটিলতাই এখন তাদের চিন্তার কারণ হবে। বাইরের দিক থেকে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি ও আরবের সাথে সম্পর্কে খুব বেশি জটিলতার আশঙ্কা এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না।
রাজনীতিক ও বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, এ রকম একটা দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অশান্তি সৃষ্টি হওয়া খারাপ। অভ্যন্তরীণ অশান্তি হলে এটা ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা থাকে। নেতানিয়াহুর দলের লোকেরা তার বিরুদ্ধে কথা বলছে। তার বিরোধী আছে, সে চাইছে যুদ্ধ ছড়িয়ে যাক। এটা সবখানের গল্প। যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে পারলে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব। ইরানে অশান্তি হওয়া মানে মধ্যপ্রাচে ক্ষমতার ব্যালেন্সকে বেশ ক্ষতি করবে।
নিছক দুর্ঘটনা নাকি কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার ইরানি প্রেসিডেন্ট? এখনও নিষ্পত্তি হয়নি বিষয়টি। এছাড়া, এখন পর্যন্ত ইরানের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় কোনো দেশ বা গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়নি। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কেন নিজেদের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করছে ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল?
এ নিয়ে এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে ইসরায়েল কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। ব্ল্যাক বক্স, ডেটা উদ্ধার হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে দুর্ঘটনার কারণ কী ছিল।
শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইব্রাহীম বিন হারুন বলেন, দুর্ঘটনার শিকার যেহেতু ইরানের প্রেসিডেন্ট, তাই সন্দেহ ও নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা আসছে। যেহেতু আগে থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের বিরোধ রয়েছে, তাই তাদের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়া হবে বলেই আগে থেকেই বলছে, এই ঘটনায় তারা জড়িত না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ইস্যু খুব আক্রমণাত্বকভাবে মোকাবেলা করেছেন ইব্রাহিম রইসি। হামাস, হিজবুল্লাহ কিংবা হুতির সঙ্গেও রেখেছেন নিবিড় সম্পর্ক। সবকিছুর পরও বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা গাজা ইস্যুতে নীতি পরিবর্তন করবে না তেহরান।
ইব্রাহিম বিন হারুন বলেন, রইসি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ৩-৪ বছর। ইরানের সাথে হামাস ও হিজবুল্লাহর সম্পর্ক কয়েক দশকের। যে ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্বারা ইরান পরিচালিত হয় কিংবা যিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পদে আছেন… কাউন্সিল আছে, তাদের নীতিতেই ইরান চলবে। ইরানের পরিচালনায় রইসির ব্যক্তিগত ভূমিকা খুব বেশি ছিল? তার মৃত্যৃতে এতে বেশি প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না।
ডা. জাহেদ উর রহমান বললেন, ইরানের প্রেসিডেন্টকে আমেরিকা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মতো করে দেখলে হবে না। ইরানের প্রেসিডেন্টকে এক ধরনের নির্বাহী বলা যায়। পলিসি তৈরি বা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, তা বলাও ঠিক না; কিন্তু মূল ক্ষমতা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। এখন সমস্যা হচ্ছে, ভবিষ্যতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কে হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়ে গেছে।
/এমএন
Leave a reply