গদি পেতে যে সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে মোদি

|

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর গত দুদিনের বুথফেরত জরিপে ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) নিয়ে যে আভাস দেয়া হয়েছিল, সে গনেশ উল্টে যাচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই। বুথফেরত জরিপে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ‘এনডিএ’ ৪০০ এর কাছাকাছি আসন পেতে পারে বলে বলা হয়েছিল। মোদি নিজেও একাধিকবার দাবি করেছিলেন, এককভাবে বিজেপি ৩৭০ আসনে জিতবে।

তবে এ পর্যন্ত ভোট গণনা শেষে দেখা যাচ্ছে– সব মিলিয়ে বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি আসন (শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত)। অন্যদিকে, কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি। ভারতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ২৭২টি আসন। উল্লেখ্য, গত নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩০৩টি আসন পেয়েছিল।

অর্থাৎ, ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে ৩২ আসনে পিছিয়ে। ফলাফলে এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে, শরীকদের সঙ্গে নিয়েই জোটগতভাবে সরকার গঠন করতে হবে বিজেপির। এক্ষেত্রে ভিন্ন সমীকরণও দেখা যেতে পারে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।

প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে প্রধানত দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে লড়াই করছে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো। একটি হচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ’ জোট। অন্যটি হলো বিরোধীদল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট।

লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪৩টি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, প্রাথমিক ফলাফলে ২৯৫ আসনে এগিয়ে ‘এনডিএ’। অন্যদিকে, ‘ইন্ডিয়া’ জোট এখন পর্যন্ত এগিয়ে ২৩১ আসনে।

ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে এনডিএ জোটের ভেতরে-বাইরের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে কংগ্রেস। হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, এনডিএ জোটের শরিক অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডি-ইউ) প্রধান নীতীশ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাগড়ে। এছাড়া, ওডিশার নবীন পাটনায়েকের বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং বিহারের লোক জনশক্তি পার্টির (রাম বিলাস) সঙ্গেও কথা হয়েছে তার।

বিহারে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৫টি লোকসভা আসনে এগিয়ে রয়েছে নীতীশ কুমারের দল। রাজ্যটিতে বিজেপি পাচ্ছে মাত্র ১৩টি আসন। একই জোটের দুই দল হিসেবে জেডি-ইউ বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে নীতীশের সঙ্গে খাগড়ের যোগাযোগের বিষয়ে জেডি-ইউ’র এক নেতা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, তার দলের অবস্থান বদলের সম্ভাবনা কম।

কংগ্রেস নেতাদের আশা, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকেও ইন্ডিয়া জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে রাজি করাতে পারবেন তারা। শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা রাজ্যটিতে বেশ কয়েকটি আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। এর মধ্যে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২টিতে চূড়ান্ত ফলে জয় পেয়েছে।

এছাড়া, শিবসেনার আরেক অংশের নেতা উদ্ভব ঠাকরের সঙ্গেও তাদের কথা হয়েছে। উদ্ভব ঠাকরের দলও ১০টি আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪টি আসনে চূড়ান্ত ফলে জয় পেয়েছে দলটি। বাকি ৬টিতেও এগিয়ে রয়েছে তারা।

বিজেডির নবীন পাটনায়েক, বিজেপি বা কংগ্রেস– দুই দলের থেকেই সমান দূরত্ব বজায় রেখেছিল। তবে হিন্দুস্তান টাইমসের খবর, ওডিশা বিধানসভায় নিজেদের সুযোগ বাড়ানোর জন্য কংগ্রেসের সহায়তা চেয়েছে বিজেডি। ২০১৯ সালে রাজ্যটির বিধানসভায় কংগ্রেসের আসন ছিল নয়টি। তবে এখন দলটির দখলে রয়েছে ১৬টি আসন। 

অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে আবার কংগ্রেসের প্রয়োজনীয়তা ফিরিয়ে এনেছে। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪-এ ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এবার ভোট গণনার পর দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় আসনে জয় পেয়েছে মল্লিকার্জুন খড়গের দল। 

‘ইন্ডিয়া’র সব সহযোগী দল মিলে এবার ২০০র বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ফলে লোকসভার অধিবেশনেও এবার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদিকে। 

অতএব বলা চলে,  সরকার গড়ার জন্য বিজেপির জোটসঙ্গীদের সমর্থন প্রয়োজন হবে। আর ঠিক এখানেই চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বাধীন তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) বা নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) ভূমিকা খুব বড় হয়ে উঠতে পারে।

এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েই এনডিএ-কে ভাঙিয়ে সরকার গড়ার পাল্টা চেষ্টা চালাতে পারে ‘ইন্ডিয়া’ জোটও। ফলে ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর প্রায় পনেরো ঘণ্টা পেরিয়ে দেশের সবগুলো লোকসভা আসনে ফলাফলের ট্রেন্ড জানা হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত কারা সরকার গড়বে সেই প্রশ্নটার উত্তর অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’র ওপর নির্ভর করছে।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply