ম্যাচে জিতে দেশবাসীর ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন টাইগার পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। ব্যাটিংয়ে কিছুটা ধুকলেও ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়েছে তারা। তিন ম্যাচ জিতে পৌঁছে গেছে টুর্নামেন্টের পরের রাউন্ডে, মানে সুপার এইটে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে টাইগারদের তিন ম্যাচ জয়ের প্রথম রেকর্ড এটি।
এ ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১০৬ রান। এর আগে কখনোই এত কম রান সংগ্রহ করে জেতেনি টাইগাররা। তবে জয়ের এই পথ সহজ করে দিয়েছেন দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া তানজিম হাসান সাকিব। এই ডানহাতি পেসার নেপালের টপ টু মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন একাই।
আজ সোমবার (১৭ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে পাঁচটায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংস্টনের সেন্ট ভিসেন্টের অ্যারনস ভেল গ্রাউন্ডে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ দল। কোনোমতে স্কোরবোর্ডে ১০৬ রান যোগ করে টাইগাররা।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে নেপালি ব্যাটারদের উইকেটেই থিতু হতে দেননি টাইগার বোলাররা। শুরুতেই জুনিয়র সাকিবের তিন উইকেটে ৩ ওভার শেষে ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নেপাল।
ষষ্ঠ ওভারে ওপেনার আসিফ শেখকে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার শেষে নেপালের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২৪!
স্বল্প পুঁজি সংগ্রহ করে লড়াইয়ে নেমে প্রথম ৬ ওভারে দুর্দান্ত শুরু পেয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল চাপটা ধরে রাখা। আর উইকেট পাওয়ায় নেপালের ইনিংসে প্রথম ৮ ওভারের মধ্যে তানজিম সাকিবের বোলিংয়ের কোটা শেষ করান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল। তানজিম সাকিবের বোলিং বিশ্লেষণ ৪-২-৭-৪!
জয়ের জন্য শেষ ১০ ওভারে ৬৫ রান দরকার ছিল নেপালের। হাতে ছিল ৫ উইকেট। পঞ্চম উইকেটে কুশল মাল্লা ও দীপেন্দ্র সিং জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সিঙ্গেল-ডাবল করার পাশাপাশি তাসকিন আহমেদ ও রিশাদকে সুযোগ বুঝে বাউন্ডারি মেরে রান তাড়ায় নেপালকে পথেই রেখেছিলেন কুশল ও দীপেন্দ্র। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৪৩ রান দরকার ছিল নেপালের।
মাহমুদউল্লাহর করা ১৬তম ওভারে একটি ছক্কা ও একটি চারে মোট ১২ রান নিয়ে ম্যাচটি আরও জমিয়ে তোলেন দীপেন্দ্র ও কুশল। জয়ের জন্য নেপালের সমীকরণ নেমে আসে ২৪ বলে ৩০ রানে।
১৭তম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে কুশলকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী করে তোলেন মোস্তাফিজ। ৪০ বলে ২৭ রান করেন তিনি। দারুণ এক ওভার করেন বাঁহাতি পেসার। এর মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় কুশল ও দীপেন্দ্রর ৫৮ বলে ৫২ রানের জুটি।
এরপর ১৮ বলে ২৯ রানের সমীকরণে পড়লে তাসকিনের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে আবারও ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন দীপেন্দ্র। কিন্তু ওই ওভারেই পঞ্চম বলে গুলশান ঝা-কে তুলে নেন তাসকিন। জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ২২ রান দরকার ছিল নেপালের। ১৯তম ওভার মেডেন নেয়ার পাশাপাশি দীপেন্দ্রকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী করেন মোস্তাফিজ। ৩১ বলে ২৫ করে ফেরেন তিনি।
৪ ওভারে ১ রানে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে দারুণ অবদান রাখেন মোস্তাফিজ। শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। ২২ রানের খুব কঠিন সমীকরণে পড়া নেপালের শেষ দুইটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব।
এর আগে, ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে নেপালি ঘূর্ণিতে ৩ বল বাকি থাকতেই ১০৬ রানে অলআউট হয়ে যায় টাইগাররা। ইনিংসের প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মারেন ওপেনার তানজিদ তামিম। পরেই ৪ রানে আউট হন তিনে নামা নাজমুল শান্ত। ৭ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ২১ রানে ৩ উইকেট হয়ে যায়। লিটন আউট হন ১০ রান করে।
এরপর ক্রিজে আসা তাওহীদ হৃদয়ও ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। তার আউটে বড় বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। হৃদয় সাজঘরে ফিরেন ৯ রান করে। বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৪ ওভারে ৩০ রানে হারায় ৪ উইকেট।
এরপর হাল ধরার বার্তা দিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু রান আউটের ফাঁদে পড়েন তিনি। ১৩ রানেই বিদায় নেন তিনি। এরপর আউট হন সাকিব। করেন ১৭ রান। কিছুক্ষণ না পেরুতেই আউট হন জুনিয়র সাকিব। এরপর ৭ বলে ১৩ করেন রিশাদ। দলের হয়ে শেষ দিকে তাসকিন ১২ রান করেন। এরপর মোস্তাফিজ রান আউট হলে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
নেপালের হয়ে সর্বোচ্চ দুইটি করে উইকেট শিকার করেন সোমপাল কামি, দিপেন্দ্র সিং আইরি, রোহিত পৌদেল ও সন্দ্বীপ লামিচানে।
/এমএইচ/এমএন
Leave a reply