নোয়াখালী সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার নেই, আরএমও পদত্যাগ দাবী সমন্বয়কদের

|

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

ঘড়িতে সকাল ১০ টা, বাইরে টিকেট কেটে অপেক্ষায় সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। ৩ বছরের ছেলে ফরহাদকে কোলে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে। তখন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন হাসপাতালে আসছি সকাল পৌনে আটটায়। ২ ঘণ্টা পার হয়ে ১০টা বাজতে চলছে এখনও ডাক্তাররা চেম্বারে আসেন নাই। ছেলের নিউমেনিয়া ও শ্বাসকষ্ট আছে এ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলে যদি এখন মারা যায় এ দায়ভার কে নিবে?

রবিবার(১১ আগষ্ট) সকালে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে সরজমিনে পরিদর্শন করতে যায় নোয়াখালী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা। পরিদর্শনের সময় তাদের চেখে ধরা পড়ে বিভিন্ন অনিয়ম। অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মহিউদ্দিন আজিমকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন তারা। 

সমন্বয়দের সাথে সরজমিনে আউটডোরের চক্ষু, ডেন্টাল, চর্ম ও এলার্জিসহ কয়েকটি বিভাগে ঘুরে দেখা যায় সকাল ৮ টায় ডাক্তারদের আসার কথা থাকলেও ১০ টায়ও দেখা মিলেনি অনেক ডাক্তারের। তখনই প্রায় দুই ঘণ্টার ধরে অসহায় চোখে ডাক্তারের অপেক্ষা করছিলেন ফরহাদের মা হেনা আক্তার। ছেলের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে আসলেন শিশু ডাক্তার দেখাতে আর আর অপেক্ষা করে ডাক্তারের দেখা না পেয়ে একরাশ হতাশা নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংবাদিক ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের  সমন্বয়কদের সামনে। একই অভিযোগ করেন হাসপাতালে আগত বেশ কয়েকজন রোগী ও তার স্বজনরা।

গ্রাম থেকে আসা বয়স্ক আবুল হাসান চর্মরোগের ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে এসেছে। টিকিট কেটে ২ ঘণ্টার উপরে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু ডাক্তারের দেখা মিলেনি। আপসোস করে বলেন প্রাইভেট হাসপাতালে বড় ডাক্তারের ভিজিট বেশি। সরকারি হাসপাতালে আসলাম। তাও ডাক্তার নাই। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত আউটডোর চেম্বারে চিকিৎসকদের রোগী দেখার কথা থাকলেও বেশিরভাগ চেম্বারে কোনও ডাক্তারের দেখা মিলেনি। আউটডোরের টিকিট কেটে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিল দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। এসময়ে চর্ম ডাক্তারের চিকিৎসককে না পেয়ে কয়েকজনকে ফিরে যেতেও দেখা যায়। 

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব বলেন, আমাদের দেখে তাৎক্ষণিক কয়েকজন ডাক্তারকে আউটডোরে বসিয়ে সেবা দেয়ার চেষ্টা করে। তখন আমরা  তাদের কাছে কখন কোন ডাক্তার বসেন এ বিষয়ে একটি তালিকা চাইলে তারা তালিকাটি দিতে পারেননি আমাদের। এ সময় উপস্থিত সমন্বয়কদের সাথে নিয়ে পরিদর্শনে গিয়ে পাননি কয়েকজন ডাক্তারদের। বিভিন্ন যায়গায় খুঁজে পান অনিয়ম। পর তাৎক্ষণিক সমাধান করার চেষ্টা করেন। 

এ দিকে সমন্বয়করা আবসিক মেডিকেল অফিসার মহিউদ্দিন আজিমের বিরুদ্ধে  মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিজ্যসহ বিভিন্ন অনিমের অভিযোগ আনলে তিনি তা স্বীকার করে বলেন আগে যা হয়েছে তা আমার ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন কাজ আর করবো না। তবে নোয়াখালী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা তাকে অবিলম্বে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের দাবী জানান। 

পরে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে, নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক হেলাল উদ্দিন কিছু অনিয়মের কথা স্বীকার করেন। সামনে এই ধরনের অনিয়ম হবে না বলে আশ্বাস দেন। যারা এই ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply