বাংলাদেশ বেতারে বৈষম্য নিরসনে সমন্বয় কমিটির ৭ দফা

|

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি উন্নত ও বৈষম্যহীন ব্রডকাস্টিং সার্ভিস বিনির্মাণে বাংলাদেশ বেতারের বৈষম্যবিরোধী সমন্বয় কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ৭ দফা দাবি পেশ করেছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত বাংলাদেশ বেতারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিল্পী এবং কলা-কুশলীরা।

সভার শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দেওয়া সকল বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং একইসাথে তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানানো হয়। এছাড়া এ আন্দোলনে আহত সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়।

আলোচনায় বাংলাদেশ বেতারের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা এবং একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ বেতারকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। এ সময় সমন্বয়ক কমিটির বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ বেতারে চলমান বৈষম্য নিরসন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করা না গেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মূল যে লক্ষ্য তা বাস্তবায়িত হবে না।

৭ দফা দাবিসমূহ হলো:

১. বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন গ্রেডে কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন যাবন পদোন্নতি বঞ্চিত। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠান বিভাগের ৯ম, ১৩তম এবং ১৫তম বিসিএস-এর কর্মকর্তারা এখনো ৪র্থ গ্রেডে আছেন। এছাড়াও ২৪ থেকে ২৭ তম বিসিএস-এর কর্মকর্তারা ৬ষ্ঠ গ্রেডে যাদের অধিকাংশ ১৪ বছরের অধিক এবং ২৮ থেকে ৩৭ তম নবম গ্রেডের অধিকাংশ কর্মকর্তা প্রায় ৮ থেকে ১৪ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত। এই গ্রেডের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম প্রমোশনই পাননি। সেক্ষেত্রে অনুষ্ঠান, বার্তা ও প্রকৌশল বিভাগের এসব পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক প্রশাসন ক্যাডারের সম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির তারিখ থেকে ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করা। শূণ্য পদ না থাকলে বা পদ সৃজন হওয়ার আগ পর্যন্ত ভুতাপেক্ষ ইনসিটু/সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি প্রদান করা।

২. বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদে সরাসরি বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা।

৩. উপসচিব পদে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করা এবং একই সাথে ৩০তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারকে মূল ধরে উপসচিব পদের জন্য বেতার থেকে যে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে তা বাতিলপূর্বক পূণরায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে উপসচিবের তালিকা প্রেরণ করা।

৪. বিসিএস তথ্য ক্যাডারের চারটি সাব-ক্যাডার রয়েছে। উপসচিব পদে আবেদন প্রেরণের ক্ষেত্রে এ চারটি সাব ক্যাডারের মধ্যে একটি সাব ক্যাডার গণযোগাযোগ/পিআইডি (কোড ১২১) থেকে ১৩৬ টি ভিত্তি পদের বিপরীতে প্রতি বছর ১০ টি আবেদন গ্রহণ করা হয় অথচ নিদারুণ বৈষম্যের নজির স্থাপন করে বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত তথ্য সাধারণ ক্যাডার অনুষ্ঠান (কোড ১২২), বার্তা (কোড ১২৩) এবং টেকনিক্যাল ক্যাডার প্রকৌশল (কোড ৫৩০) এই ৩টি সাব-ক্যাডার থেকে ৩২৩ টি ভিত্তি পদের বিপরীতে অযৌক্তিক ভাবে মাত্র ১০ টি আবেদন গ্রহণ করা হয়।ফলাফল হিসেবে গত ১০ বছরে ১২১ কোড থেকে ২৪ জন, ১২২ কোড থেকে মাত্র ০৬ জন, ১২৩ কোড থেকে ০৮ জন এবং ৫৩০ কোড থেকে ১১ জন উপসচিব হয়েছে যা চূড়ান্ত বৈষম্যের শামিল। পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের চারটি সাব ক্যাডার থেকেই সমহারে উপসচিব এর আবেদন গ্রহণ করা এবং ভিত্তি পদের সমহারে উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা।

৫. বর্তমানে বিদ্যমান আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন করা সময়ের দাবী। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন করা না গেলে বৈষম্যহীন সমাজ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে যাবে।

৬. ক্যাডার, নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা খুব দ্রুত অনুমোদন এবং তা বাস্তবায়ন করা।

৭. বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান নিয়ে সম্প্রচার ক্যাডার বাস্তবায়ন অথবা বিসিএস (তথ্য) সাধারণ ক্যাডারের ৩ টি সাব-ক্যাডারকে একিভূত করা এবং অদূর ভবিষ্যতে বিটিভিকে এই ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা।

সভা শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বেতারের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী, শিল্পী, কলাকুশলী দিন রাত পরিশ্রম করে মানুষের মাঝে তথ্য সবরাহ করে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কারফিউ, জরুরি অবস্থা, আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো অবস্থাতেই বসে নেই তারা। বেতার কর্মীরা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গিকারবদ্ধ। এ কাজ আরও সুচারুরূপে করার জন্য বেতার কর্মীরা সকলের সহযোগিতা কামনা করে।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply