ওউদ বাজিয়ে গাজার শিশুদের মন ভোলাতে ছুটছে সাদ

|

এ যেন বাস্তবের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। তবে বাঁশি নয়, আরবী সংস্কৃতির জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র ওউদ পিঠে ঝুলিয়ে ছুটে চলেছে ইউসুফ সাদ নামের গাজার এই কিশোর। আর তার পেছনে ছুটছে, অন্য শিশুরাও।

যে বয়সে হেসে খেলে দিন কাটানোর কথা, সে বয়সে অন্যের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় গাজার এই কিশোর। প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ওউদের মোহনীয় সুর দিয়ে গাজার স্বজন হারানো শিশুদের মন ভোলানোর চেষ্টা করছে ১৫ বছর বয়সী সাদ। প্রায় ১১ মাস ধরে চলা আগ্রাসনের যে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে উপত্যকাটির শিশুদের ওপর, তা কিছুটা হলেও কাটানোর চেষ্টায় তৎপর এই কিশোর। ঘর-বাড়ির ধ্বংসস্তুপে ঢাকা পড়া রাস্তা পেরিয়ে তাই প্রতিদিন শরণার্থী শিবিরে গিয়ে সে গান শোনায় শিশুদের, শেখায় ওউদ বাজানো।

জাহান্নামে বসে পুষ্পের মতো হাসতে পারার অসীম ক্ষমতা যেন তাকে দু’হাত ভরে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা। আর তাই তো নিজ বাড়ির ধ্বংসস্তুপে বসে প্রিয় ওউদে এমন মোহনীয় সুর তুলছে সাদ। মাথাগোজার ঠাই আর স্বজন হারালেও, শোকের কাছে হারেনি ১৫ বছর বয়সী এই কিশোর।

সাদ বলেন, প্রত্যেক বাড়িতে আপনি ট্র্যাজেডি খুঁজে পাবেন। সবাই কোনো না কোনো প্রিয় মানুষকে হারিয়েছেন। অবর্ণণীয় কষ্ট সবাইকে ভোগ করতে হচ্ছে। কিন্তু বাঁচতে হলে তো বাঁচার মতো বাঁচতে হবে। সেই চেষ্টাই করছি।

নিজের এই প্রাণোচ্ছল জীবনের আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে গাজার বাকি শিশুদের মাঝেও। গান শোনাতে ছুটছে গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। আতঙ্কিত-শোকাহত শিশুদের শেখাচ্ছে ওউদ বাজানোর কৌশলও। শিশুরা জানান, মানুষ তো আশায়ই বাঁচে। আমরা আশা করে আছি, একদিন সব আগের মতো হবে। মরলে বীরের মতো মরতে হবে, কাপুরুষের মতো নয়। তাই যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও নিজে প্রাণবন্ত থাকছি, বাকিদেরও রাখার চেষ্টা করছি।

সাদের স্বপ্ন আকাশসম। যুদ্ধ শুরুর আগে স্থানীয় এক মিউজিক ইন্সটিটিউটে গান নিয়ে পড়াশোনা করছিলো সে। স্বপ্ন- একদিন বিশ্বের নামকরা একজন গায়ক হবে সে। এখন শিশুদের জন্য কিছু করাই তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য হলেও বড় গাইয়ে হওয়ার স্বপ্ন এখনও জিইয়ে রেখেছে সে।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply