সাড়া ফেলেছে ‘মানবতার দেয়াল’

|

কামাল হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:

একটি দেয়ালে লেখা- ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান, প্রয়োজনীয় জিনিস এখান থেকে নিয়া যান’। দেয়ালটিতে হ্যাংগারে কিছু কাপড় ঝুলানো। প্যান্ট-শার্ট-গেঞ্জি-চাদর ইত্যাদি। কেউ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের অতিরিক্ত দুয়েকটি কাপড় এখানে রেখে যান। আবার অন্য কেউ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রয়োজন মনে হলে এখান থেকে একটি-দুটি কাপড় নিয়ে যান।

এমন ব্যতিক্রমধর্মী এক উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলা সীমান্ত এলাকায়। স্থানীয় যুবক জাহাঙ্গীর মাহমুদ এর উদ্যোক্তা।

মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্ন্তী উপজেলা নেত্রকোণার দুর্গাপুর। পাহাড় ঘেরা জনপদ হওয়ায় শীতের প্রকোপ চলে আসে আগে ভাগেই । ফলে শীতের প্রকোপে অসহায় হয়ে পড়েন দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষজন।

সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষের সমস্যা কিছুটা লাঘব করতে গত ১৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীর মাহমুদ দুর্গাপুর পৌরসভার শিবগঞ্জ বাজারের মসজিদ মার্কেটের একটি দেয়ালে গড়ে তুলেছেন ‘মানবতার দেয়াল’।

দুদিনের মাঝেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে ‘মানবতার দেয়াল’। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন স্থানে খুব দ্রুতই ভাইরাল হচ্ছে ‘মানবতার দেয়াল’। সেই সাথে তাঁর উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এলাকার লোকজন। বাসার অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখন স্থান পাচ্ছে ‘মানবতার দেয়ালে’।

দুর্গাপুর পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মাহমুদ সম্প্রতি সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী পাস করেছেন। পড়াশুনা শেষে কোনো চাকরিতে না গিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাবা ইদ্রিস আলী সরকার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সমাজের উন্নয়নের কাজ করে আসছেন। মানবতার দেয়াল ছাড়াও রক্তদান বিষয়ে স্থানীয়ভাবে ‘আমরা ব্লাড ডোনার’ নামের আরো একটি সংগঠনের সাথে আছেন তিনি। বিগত ৪ বছরে প্রায় ২০০ ব্যাগ রক্তের জোগান দেয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

উদ্দ্যোগটির নাম ‘মানবতার দেয়াল’ রাখার কারণ কেন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, আমি বাজার থেকে ব্যাগ তৈরির জন্য পুরান প্যান্ট কিনতে গিয়ে মানুষের ভীড় দেখি। এসময় মাথায় এলো পুরাতন কাপড়গুলো কিভাবে অন্যদের দেয়া যেতে পারে। ‘আমরা হেলায় বা আলসতার কারণে কাউকে দান করতে পারিনা। আবার কাকে দিব, দিতে গেলে সে নেয় কি না, কাপড়টা দিয়ে তাকে ছোট করা হবে কিনা এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের মনে আসে।’

কিন্তু যদি এটাকে এমন একটা জায়গায় রাখা যায় তাহলে সেখানে সবাই নিজের ইচ্ছা মত অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যাবে আবার প্রয়োজনীয় যে কোন জিনিস নিতেও পারবে। এখানে কাউকে কারো মুখোমুখি হতে হবে না। তাই এর নাম রেখেছি ‘মানবতার দেয়াল’।

তিনি আরো জানান, আমার ইচ্ছা এটাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। আমাদের আশেপাশের গরীব অসহায় মানুষগুলো যেন কাপড়ের জন্যে বিশেষ করে শীতের কাপড়ের জন্যে কষ্ট না করে- এই জন্যেই এই উদ্যোগ। শুধু কাপড় নয়, অনেকে জুতোও রেখে যান এবং অন্য কেউ সেটা নিয়ে যান।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নেত্রকোণা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং কলমাকান্দা উপজেলার বালুচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম স্যারের কাছ থেকে আমি এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এছাড়াও ঢাকায় সামিউল নামে আমার এক চাচা আছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমার ভাগ্নী কামরুন্নাহার মুন্নি। এই দুইজন ব্যক্তি আমাকে যথেষ্ট সাহস জুগিয়েছেন।’


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply