সড়কে কৃষি কর্মকর্তার মৃত্যু: সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছিলেন বেসরকারি ড্রাইভার

|

বাউফল করেসপনডেন্ট:

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় অ্যাম্বুলেন্সের সাথে সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজিতে থাকা এক কৃষি কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ভুবন সাহার কাচারি নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম মিলন হাওলাদার। তিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এই মৃত্যুর দায় কার? যমুনার অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

দুর্ঘটনার শিকার অ্যাম্বুলেন্সটি পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি পরিবহন। ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালক রুহুল আমিন সরকারি গাড়ি চালক নয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মানুযায়ী, সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত চালক ছাড়া কেউ সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালাতে পারবে না। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক অবসরে যাওয়ার পর থেকে রুহুল আমিন নামের ওই ব্যক্তি অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছেন। এছাড়াও দশমিনা থেকে বরিশালে সরকার নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ১৮০০ টাকা হলেও রুহুল আমিন রোগীদের থেকে ৩৩০০ টাকা আদায় করতেন।

দশমিনা উপজেলার বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ মিরাজ জানান, দুর্ঘটনার শিকার অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছিলেন রুহুল আমিন। অভিযোগ করেন, তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বিধিবহির্ভূতভাবে চালাচ্ছিলেন। রোগীদের থেকেও নিতেন অতিরিক্ত টাকা। অভিযুক্ত চালকের লাইসেন্সের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। এছাড়া তিনি নিয়মিত মাদক সেবন করতেন বলেও অভিযোগ তোলেন মিরাজ। যা হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট অনেকেই অবগত বলেও জানান তিনি।

তবুও কেন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে তাকে অ্যাম্বুলেন্স চালাতে দেয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) মোস্তাফিজুর রহমান যমুনা নিউজকে বলেন, রুহুল আমিন আমার জন্য নির্ধারিত জিপের ড্রাইভার। আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার অবসরে যাওয়ায় বিশেষ প্রয়োজনে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের বরিশাল পৌঁছে দিয়ে থাকেন। তাছাড়া বর্তমানে সরকারিভাবে ড্রাইভার নিয়োগ বন্ধ আছে।

অতিরিক্ত অর্থ আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের তেলের খরচের ক্ষেত্রে সরকার সবসময় ভর্তুকী দেন। কিন্তু আমাদের ড্রাইভার না থাকায় আমরা সেই ভর্তুকী পাইনা। তাই তেলের খরচ হিসেবে সকলের সম্মতিতেই সুবিধাভোগীদের থেকে এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় নেয়া হয় বলে জানান তিনি। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. কবির হাসানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিধি উপেক্ষা করে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি তদন্ত না করে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে বাউফল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, দশমিনার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন রুহুল আমিন আউট সোর্সিং ড্রাইভার। আমরা রুহুল আমিনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের চেষ্টা চলছে। লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সের চালক রুহুল আমিন পলাতক রয়েছেন এবং সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি বাউফল থানা হেফাজতে রয়েছে।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply