সুশান্ত সিনহা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বাতাস বা বায়ু দূষণের মানদণ্ড অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। রেকর্ড ৯৭ দশমিক ১ নম্বর পেয়ে খারাপের তালিকায় ১ম হয়েছে। বাতাস দূষণের সূচক পিএম ২.৫ এর মানদণ্ড বিবেচনায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশ এই তকমা পেয়েছে। এয়ারভিজ্যুয়াল ও গ্রীনপিস নামক দুটি সংস্থার এই প্রতিবেদন গেল ৭ মার্চ প্রকাশ করেছে। ৭৪ দশমিক ৩ নম্বর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান এবং সাড়ে ৭২ নম্বর নিয়ে সূচকের তৃতীয় স্থানে আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত।
দূষণের চ্যাম্পিয়ন ত্রয়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত তথা অবিভক্ত ভারতবর্ষ যেখানে বাস করে প্রায় ১৭০ কোটি মানুষ। পুরো পৃথিবীতে মানুষের বাস ৭৭০ কোটি। এ অঞ্চলের আরেক ভয়াবহ দূষিত বায়ুর দেশ চীন। চীনের লোক সংখ্যা ধরলে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বাতাসের শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন ৩শ ১০ কোটি মানুষ, যা প্রায় বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক। যদিও চীন বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিয়ে। অর্থনৈতিক শক্তিতে ভারতও শীর্ষস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশও উন্নয়নশীল অর্থনীতির খাতায় নাম লিখতে পা ফেলেছে। গেল ১০ বছরে ধারাবাহিক মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ শতাংশ বেশি।
সব মিলিয়ে অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ভরকেন্দ্র এশিয়ার এই অঞ্চল, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও চীন। অর্থনৈতিক সূচকে এত ভাল করার পরও এই তিন দেশের বাতাস এত দূষিত? তবে অর্থনীতির উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে দূষণ বেড়েছে কেন? রাত দিন ২৪ ঘণ্টা দূষিত বাতাসের মধ্যে যাদের বাস হলে কী জীবনমান উন্নয়ন টেকসই হবে? দেশ মানে তো মানুষ, উন্নয়নের প্রধান বিবেচ্য বিষয়ও মানুষ। তাহলে আকাশ বাতাস দূষণ করে এমন উন্নয়নের পেছনে কেন ছুটছে বাংলাদেশ?
দূষণের সবচেয়ে বড় শিকার শিশুরা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে পরিপূর্ণতা পায়। ফলে জন্মের পর থেকেই যদি শিশুদের শরীরে ভয়াবহ দূষিত বাতাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে প্রবেশ করে তাহলে তাদের ফুসফুসতো অকেজো হয়ে পড়ার শংকা বেড়ে যাবে। সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে না শিশুরা যতই আমরা শৈন শৈন করে উন্নয়ন করি না কেন।
তাই সময় হয়েছে পরিবেশকে মাথায় রেখে, মানুষের কথা তথা জনস্বাস্থ্যকে প্রধান বিবেচনা করে উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যতটা কম দূষণ করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকে নজর দিতে। ঠিকাদারদের উপর কাজ ছেড়ে বসে থাকলে চলবে না। সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়াতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে আর্বজনা সরিয়ে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দূষণ কমাতে হবে।
আর তা যদি না হয়, এভাবে রাস্তা-ঘাটে সরকারি উদ্যোগে বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত করি তাহলে আর যাই হোক উন্নয়ন স্থায়ীত্ব পাবে না। উন্নয়ন টেকসই হবে না। পরিবেশ না বাঁচলে মানুষ বাঁচবে না। আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠবে অসুস্থ হয়ে, মেধাহীন জাতিতে পরিণত হবে দেশ। স্বাস্থ্য সেবায় বিপর্যয় নেমে আসবে। আর চিকিৎসা করতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ পথে বসবে, গরীব আরও গরীব হবে, বেড়ে যাবে হত দরিদ্রের সংখ্যা। তাই সময় হয়েছে দূষণের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেয়ার। (চলবে)
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন
[email protected]
Leave a reply