ফুটবলে একটা কথা আছে ‘কোচরা বরখাস্ত হবে জেনেই চাকরি নেন’। ক্রিকেটে ঠিক তার উল্টো। অন্তত ক্রিকেটপ্রেমী মানুষগুলোর এমনই ভাবনা। বিশেষ করে বাংলাদেশে। যেটা আরো একবার পরিষ্কার হয়েছে বিসিবি সভাপতির সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেছেন, হাথুরুসিংহের চলে যাওয়ায় অনেকেই স্বস্তি পাবেন, মিডিয়ারও অনেকে খুশি হবে। ক্রিকেটারদের মধ্যেও অনেকে হবেন। যারা আবেগ দিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখেন তাদের অনেকের কাছে যেমন সাকিব আল হাসানের পেশাদারিত্ব পছন্দের নয়, একইভাবে হাথুরুসিংহও পছন্দের নন।
তাকে ঘিরে একটি বড় সমালোচনা- অনেক বেশি পরিসংখ্যান নির্ভর কোচ তিনি। জয় পরাজয়ের হিসেব ছাড়া বুঝতেন না কিছুই। ভাবুনতো সাকিবের অনবদ্য সেঞ্চুরির পর জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। একজন ভক্ত হয়ে আপনি কি এটা মানতে পারবেন? আর হাথুরুর জন্য তো এটা ছিলো চাকরি। দিনশেষে তার পারফরম্যান্সের মূল্যায়নও হবে সেই দলের পারফরম্যান্সেই। সফলতার পিছু ছুটতে তার কৌশলটা কেমন ছিলো? এখানেই অনেকের আপত্তি। শাহরিয়ার নাফীস, নাসির হোসেন কিংবা মুমিনুলের মতো ক্রিকেটাররা যখন একাদশে জায়গা পান না, হাথুরুকে নিয়ে সমালোচনার শুরু হয়। দীর্ঘসময় উইকেট না পড়লে অধিনায়ক যেমন পার্টটাইম বোলার ব্যবহার করেন, তেমনি কোচরাও অনেক সময় বাজি ধরেন। সেটি সৌম্য সরকারকে নিয়ে ধরেছিলেন হাথুরু। যদিও এখানে অনেক চেষ্টা করেও পাশ মার্ক তুলতে পারেননি।
সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে চরম বাস্তবতাটাই ভুলে গিয়েছিলেন। তারুণ্যনির্ভর একটি দল নিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলার পরিকল্পনা ছিলো তার। সে লক্ষ্যে দল গোছাতে গেলে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে। যা আরো তাতিয়ে দেয় শততম টেস্টে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়ার ঘটনা। গুঞ্জন উঠে আরো ক্রিকেটারদের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের। সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার প্রমাণ মিলেছে সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বন্ধুত্ব, বিনয়, সম্মান এগুলো আলোচনা করে হয় না। কাজ করে অনুভূতিতে। দেরিতে হলেও সেটা বুঝতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো এভাবে বিদায়!
তবে হাথুরুসিংহকে এদেশের মানুষ, ক্রিকেটার কিংবা বোর্ড যেভাবেই দেখুক না কেন, দেশের ক্রিকেট তাকে মনে রাখবে স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবেই। তার কাছ থেকেই যে প্রথম উইকেট আর কন্ডিশন বুঝে একাদশ করা, প্রতিপক্ষের সামর্থ্য মাথায় রেখে উইকেট তৈরি করা শিখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারি এই মানসিকতা তৈরি করার কৃতিত্বও হাথুরুকে দিতে হচ্ছে। সর্বোপরি, তিনিই বুঝিয়েছেন বাংলাদেশ আর হারতে খেলে না।
এহতেসাম সবুজ
সিনিয়র রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন।
Leave a reply