গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
এবার নতুন পাকা ঘর পেল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা হওয়া গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জমজ শিশু তোফা-তহুরা। কোমড়ের নিচে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়ার পর আলাদা করা বিস্ময় শিশু দুটির জন্য ‘সুখের নীড়’ নামে একটি পাকা ঘর করে দিয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঝিনিয়া গ্রামে বাবা সাজু মিয়ার বাড়িতে ‘তোফা-তহুরার সুখের নীড়’ পাকা ঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করা হয়।
এ উপলক্ষে তোফা-তহুরার বাবা সাজু মিয়ার বাড়ির আঙ্গিনায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক এটিএম মকবুল হোসেন প্রামাণিক, ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কবীর মুকুল, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক সাজেদুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া সময় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সুধিমহল ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন ফিতা কেটে শিশু তোফা-তহুরার ঘরের উদ্ভোধন করেন।
তোফা-তহুরার জন্য ‘সুখের নীড়’ নামে আলাদা পাকা ঘর পেয়ে খুশি স্বজনরা। মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘বর্তমানে দুজনেই সুস্থ আছে। দুজনেই একসঙ্গে হেঁসে খেলে বড় হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে তহুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঠিকভাবে খায় না, প্রসাব ও পায়খানারও সমস্যা হয়। জন্মের পর থেকে সবসময় চিকিৎসক, সরকার ও প্রশাসন তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে অভাবের সংসারের কারণে স্বামী সাজু মিয়া ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকের সহায়তায় সেখানে চাকরি করছেন। কিন্তু মাসিক ছয় হাজার টাকা পেলেও তা দিয়ে সংসার ঠিকভাবে চলে না। এজন্য স্বামী সাজু মিয়ার স্থায়ী একটা ভালো চাকরির দাবি জানান তিনি’।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, ‘শিশু তোফা-তহুরার পাশে সবসময় সহযোগিতা ছিলো। তাদের লেখাপড়াসহ আগামিতে সব ধরণের সহযোগিতা থাকবে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে নতুন পাকা ঘর ‘তোফা-তহুরার সুখের নীড়’ নামে করা হয়েছে’।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সেলেমান আলী বলেন, ‘শিশু দুটি যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে বড় হতে পারে সেজন্য সর্বদাই দৃষ্টি রাখা হবে। এছাড়া তাদের খোঁজখবর ও নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি তোফা তহুরা চিকিৎসা বিজ্ঞানে দৃষ্টান্ত এবং আলোকিত মানুষ হয়ে উঠবে’।
প্রসঙ্গত : ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কোমরের নিচে জোড়া লাগানো অবস্থায় নানার বাড়িতে জন্ম নেয় তোফা-তহুরা। পরে ৭ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় তাদের। এরপর ১৬ অক্টোবর তোফা-তহুরার প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট সফল অপারেশনের মাধ্যমে তাদের আলাদা করেন ঢাকা মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
Leave a reply