মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ তেজগাঁওয়ের বাসিন্দারা। এতে বাড়ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের শঙ্কা। মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলায়ও মশার কয়েল ব্যবহারে মুক্তি মিলছে না বাসিন্দাদের।
মশা নিধনে প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশনের ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও মাসে একবারও দেখা মেলে না কর্মীদের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে বাসিন্দারা।
তারা বলছে, মশার উৎপাত মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। রাতের পাশাপাশি দিনের বেলায়ও কয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে। মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের কোনো ভূমিকাই যেন নেই। ঠিকমতো ওষুধ দেয়া হচ্ছে না।
দিন দিন মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তেজগাঁও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ ও ৫-এর আওতাধীন। ঘনবসতিপূর্ণ এ ওয়ার্ডগুলোতে চার লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।
অথচ কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। মশা নিধনে ওষুধ ছিটাতে প্রতি ওয়ার্ডে পাঁচজন করে কর্মী দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এসব কর্মীকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের আওতাধীন করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মীর দেখভাল অথবা তদারকি করছেন না কাউন্সিলররা। আর এ সুযোগে ইচ্ছেমতো ওষুধ ছিটাচ্ছে কর্মীরা।
জানা যায়, মশা নিধনে দু’ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সকালে লার্ভিসাইড নামক ওষুধ ছিটানো হয় আর বিকালে এডালার্ভিসাইড নামক ওষুধ যা ধোঁয়ার সঙ্গে দেয়া হয়।
তবে বাস্তবে এসব ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, প্রতিদিন এলাকাগুলোতে মশা নিধনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর কাউন্সিলররা বলেন, যেসব এলাকায় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না সেসব এলাকায় কাল থেকেই মশা নিধনে কর্মীরা কাজ করবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় বিভিন্ন সড়কে ময়লা পানি জমে আছে। সেসব ময়লা পানিতে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। সড়কের পাশে নালা, ড্রেন ও ময়লার স্তূপ।
বাড়ির আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াসহ নানা রোগের ভঙ্কর সব মশা।
বিশেষ করে বেগুনবাড়ি, কুনিপাড়া, নাখাল পাড়া, আরজত পাড়া, তেজকুনি পাড়া, রেলওয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা, রাজাবাজার ও শেরেবাংলা নগর এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে।
নাখাল পাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, আগের তুলনায় মশার উৎপাত বাড়ছে। কিছু মশা ছোট আকারের এবং কিছু মশা বড়। এসব মশার কামড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আর বাচ্চাদের জন্য এ মশা এক ভঙ্কর প্রাণী।
তেজগাঁও স্টেশন রোডের বাসিন্দা মাসুদ আরা বলেন, এমনিতেই প্রচণ্ড গরম। তার ওপরে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ। কয়েল জ্বালিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। গরমে মশা থেকে বাঁচতে মশারিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, গত মাসে এক দিনও মশার ওষুধ দিতে দেখিনি। রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা রোজেস বলেন, এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। একটি বাড়ির সঙ্গে আরেকটি বাড়ি লাগোয়া।
বাড়ির আঙ্গিনাগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হচ্ছে মশা। এসব মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের নানা উদ্যোগের কথা থাকলেও বাস্তব চিত্রে তা দেখা যায় না।
শেরেবাংলা নগর এলাকায় রয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও সরকারি কোয়াটার।
এ এলাকায় মশার উৎপাত মাত্রাতিরিক্ত। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোতে মশার উৎপাতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে রোগী ও স্বজনরা।
জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালে রাতের চেয়ে দিনে মশার উৎপাত বেশি থাকে। মশাগুলো বেশ বড় আকারের থাকায় খুব বিষাক্ত। হাসপাতালের আশপাশের পরিবেশ খুবই অপরিষ্কার। আর ঠিকমতো মশা নিধনের ওষুধ না দেয়ায় এর উপদ্রব বাড়ছে।
ডিএনসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান বলেন, মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের ওষুধ ও জনবল সংকট রয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এত বড় এলাকা পাঁচজন কর্মী দিয়ে কাভার করা যায় না।
আর প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধও খুবই কম থাকে। হাসপাতাল এলাকাগুলোতে আমরা সপ্তাহে এক দিন মশা নিধনের ওষুধ দিয়ে থাকি। হাসপাতাল এলাকায় লার্ভি ওষুধ দেয়া হয়। তবে এডালার্ভি ওষুধ দেয়া হয় না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিন আহসান বলেন, মশার ওষুধ নিধনে কর্মীরা কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে থাকে। আমরা ওষুধ সরবরাহ করি।
কর্মীরা কোথায় ওষুধ দিচ্ছে, পুরো ওয়ার্ড কাভার করছে কিনা- তা মনিটরিং করে থাকেন কাউন্সিলররা। তবে আমি একটি উদ্যোগ নিয়েছি। এ মাস থেকে এসব কর্মীকে ১০ দিন করে রোস্টার করে দেয়া হবে।
কোথায় কোথায় মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, কে কোন এলাকায় দিচ্ছে তা নাম ও মোবাইল নম্বরসহ ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়া হবে। এতে করে এলাকার বাসিন্দারা জানতে পারবে ও প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।
সূত্র: যুগান্তর
Leave a reply