প্রশ্নফাঁস চক্রের ৯৭ জনের বিরুদ্ধে কেন্দুয়ায় মামলা: ৮ শিক্ষককে বরখাস্ত

|

স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে সংগ্রহ করে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে উত্তরপত্র সরবরাহ করার অপরাধে কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৬০ জন সহ ৯৭ জনের বিরুদ্ধে কেন্দুয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের এস.আই আবুল বাশার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এদিকে রোববার মামলায় এজাহারভূক্ত ও প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেংকারীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কেন্দুয়া উপজেলার দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মজিবুর রহমান, নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাওয়া বেগম, লিপা মুনালিসা, বলাইশিমুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরিয়ম আক্তার, কেন্দুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার, মদন উপজেলার জঙ্গলটেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেবুন্নাহার ডলি, খাগরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাকি আক্তার, ও আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্মৃতি খানমকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

নেত্রকোণা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে রোববার তাদেরকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ক্ষমতার আওতাধীন কেন্দুয়া, মদন ও আটপাড়া উপজেলার ৮ জন সহকারী শিক্ষককে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া একই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটন, বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাকি ও পানগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুহিন আক্তারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তের আবেদন জানিয়ে উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, গত ২৮ জুন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেত্রকোণা জেলা সদরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি ও লেনদেন করে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে প্রতারণার ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের কাজে জড়িত ছিল একটি শক্তিশালী চক্র। ওই চক্রটি কেন্দুয়া পৌর এলাকার টেঙ্গুরী ছয়আনি মহল্লার শিল্পপতি মনিরুজ্জামান শামিমের বাড়িতে বসে এ কাজ করছিল।

কেন্দুয়া থানা পুলিশ গোপনসূত্রে খবর পেয়ে শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঞা শামিমের বাড়ি ঘেরাও করে। সকাল পৌঁনে ১১টা থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে ওই দু’তালা বাড়ির কক্ষে প্রবেশ করে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশ ২টি ল্যাপটপ, ১টি ব্যাটারি, ২টি মডেম, ৭টি মোবাইল, ১টি চার্জার ও অন্যান্য গাইড বই সহ ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল জব্দ করে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেন্দুয়া উপজেলা ছাড়াও নেত্রকোণা সদর বারহাট্টা উপজেলার চল্লিশা কাহনিয়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মোঃ লুৎফুর, রায়পুর গ্রামের চন্দনের ছেলে শ্রী চয়ন দত্ত, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের হযরত আলীর ছেলে লোকমান হোসেন, গৌরীপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ নাজমুল ইসলাম, বারহাট্টা উপজেলার মাহাজনপাড়া গ্রামের ফিরোজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ শরিফ, আটপাড়া উপজেলার মঙ্গলশ্রী গ্রামের বজলুর রহমানের মেয়ে মনি আক্তার,গৌরীপুর উপজেলার খোদাবক্সপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে তাসলিমা, নেত্রকোণা সদর উপজেলার উন্মেষ হাই উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিপন , নেত্রকোণা সরকারি কলেজের প্রভাষক মোমেন ও নেত্রকোণা কৃষ্ণগোবিন্দ হাইস্কুলের শিক্ষক ঝন্টু জড়িত রয়েছেন।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ময়মনসিংহের আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৩ শিক্ষার্থী রয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে চাঞ্চল্যকর ঘটনার তথ্য উদঘাটনে প্রথম ধাপে বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটন, নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজহারুল ইসলাম, শরিফুজ্জামান ভূঞা মিন্টু, বড়বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাকি, দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষক মজিবুর রহমান, বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মরিয়ম আক্তার, তেলিগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্মৃতি খানম, জঙ্গলটেঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেবুন্নাহার ডলিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে সোমবার শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন।

কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর আলোচিত ঘটনা, এ ঘটনাটি শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঞা শামিমের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ঘটনার আগের দিন রাত থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মনিরুজ্জামান ভূঞা শামিম ওই বাড়িতেই ছিলেন। মামলাটির অধিকতর তদন্তে যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের কাউকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply