মাকে ফোন দাও, বলো চিপস নিয়ে আসতে: ছোট্ট তুবার বায়না

|

তাসমিন মাহিরা তুবা। বয়স চার বছর। ছলছলে চোখে তাকিয়ে রয়। মা নিচে গেছে ড্রেস আনতে। আসার সময় চিপস, চকলেট নিয়ে আসবে। না এলে মুখে কিছু নেবে না, এমন বায়না তুবার।

তুবা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না তার মা আর আসবে না। চিরতরে তাকে ছেড়ে চলে গেছে পরপারে।

ছোট্ট এই তুবাকে ভর্তির জন্য বাড্ডার একটি স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়েই শনিবার ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। রোববার লক্ষ্মীপুরের রায়পুরার সোনাপুর গ্রামে তার দাফন হয়েছে।

মায়ের দাফনের পর খালাদের সঙ্গে ঢাকায় ফিরেছে তুবা। এখনও মায়ের ছবি সর্বক্ষণ ভাসছে তুবার সামনে।

মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি সে বুঝতে পারেনি। সে জানে, তার মা বাসার নিচে গেছে। চলে আসবে। কিন্তু কেন আসছে না- নিকটাত্মীয়দের কাছে এমন প্রশ্নও বারবার ছুড়ে দিচ্ছে ফুটফুটে তুবা। স্বজনদের কাছে বায়না ধরছে, ‘মাকে ফোন দাও, বলো চিপস নিয়ে আসতে। না এলে আমি খাব না।’

মায়ের কথা মনে পড়লে কান্না আর থামছেই না তুবার। মায়ের কথা ভুলিয়ে রাখতে স্বজনের পাশাপাশি স্কুলপড়ুয়া ভাই ১১ বছরের তাহসিন আল মাহিরকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। খেলার ছলে ছোট্ট বোনটিকে মায়ের কথা ভুলিয়ে রাখতে চাইছে সে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর বাসায় গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেল।

গত শনিবার থেকে ছয় দিন ধরে মা আসছে না। তাই তুবার মেজাজও ভালো যাচ্ছে না। সবকিছু নিয়ে বায়না করছে, বায়না মেটানো না হলেই চিৎকার, কান্নাকাটি করছে। বাসায় যে আসে সেই তুবার ছবি তুলতে চায়, এটিও তার পছন্দ নয়। তাই ঘরে অপরিচিত কেউ ঢুকে মুঠোফোন হাতে ছবি তুলতে চাইলেই তুবা বলে, ‘আমি ছবি তুলব না।’

তুবার খালা নাজমুন নাহার জানান, তুবা এখনও বোঝে না- তার মা মারা গেছে। ঘটনার দিন সকালে তুবাকে রেনু বলে গিয়েছিল, সে নিচে যাচ্ছে; চলে আসবে। তাই তুবা এখনও সেটিই জানে- তার মা নিচে গেছে, চলে আসবে। মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন করছে, তার মা কেন তাড়াতাড়ি আসছে না? মোবাইল ফোন নিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে সে।

দিনে খেলার ছলে তুবাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখলেও রাতে আর রক্ষা নেই। ঘুমের সময় হলে কান্নাকাটি শুরু। মায়ের বুকে শুয়ে ঘুমাত তুবা। এ কারণে ঘুম পেলে মায়ের জন্য খুবই অস্থির হয়ে যায়। বোঝানো মুশকিল হয়ে পড়ে তখন তাকে।

ছলছল চোখে তাকিয়ে রয় তাহসিন আল মাহিরও। বোনের বায়না তাকে আরও কষ্ট দেয়। যতক্ষণ পারছে খেলার ছলে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখছে। না পারলে চোখের পানি মুছতে শুরু করে। ‘তুবা আমার একমাত্র বোন। আমি জানি, আমার মাকে ওরা বিনাদোষে মেরে ফেলেছে। তুবা জানে না। আর কোনো দিন মাকে কাছে পাব না। খুব কষ্ট হচ্ছে। সারাজীবন এই কষ্ট থাকবে।’

প্রসঙ্গত শনিবার সকালে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন তাসলিমা বেগম। তার দুই সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে স্কুলের গেটে কয়েকজন নারী তাসলিমার নাম-পরিচয় জানতে চান। পরে লোকজন তাসলিমাকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে কয়েকশ লোক একত্র হয়ে তাসলিমাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়। স্কুলের ফাঁকা জায়গায় এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর জখম করে। পরে উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তাসলিমার বোনের ছেলে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় অজ্ঞাতনামা চারশ থেকে পাঁচশ মানুষকে আসামি করে মামলা করেন।

সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply