নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের ভয়াবহতম বিপর্যয় থেকে নিঃশ্বাস দূরত্বে ম্যাচ শেষ করেছে আর্জেন্টিনা। প্রীতি ম্যাচের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার প্রভাব বিশ্বকাপ পর্যন্ত গিয়ে না গড়ায়। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ পেতে পারে আর্জেন্টিনা। অন্যথায়, তাতে ৬-১ গোলের দুঃস্মৃতি নিয়েই নামতে হবে রাশিয়া বিশ্বকাপে।
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি মারিও কেম্পেস অবশ্য খেলোয়াড়দের দোষ দিতে নারাজ। তার কথা, এ লজ্জার পুরো দায়ভার বর্তায় একজনের কাঁধে। কোচ হোর্হে সাম্পাওলি।
ফুটবলে খেলোয়াড়দের মাঠের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি রণকৌশল যে একটা বড় ভূমিকা রাখে তাতে কোনো সংশয় নেই। এ জায়গার দারুণভাবে ব্যর্থ ছিলেন সাম্পাওলি। শেষ ১৭ ম্যাচে অপরাজিত স্পেন এই ম্যাচে নিজেদের মাঠে খেলেছে। আর সাম্পাওলি কিনা একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চালিয়ে গেলেন!
মেসিকে ছাড়াই গত ম্যাচে ইতালিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচের দুই গোলদাতাকে কিনা এ ম্যাচে প্রথম একাদশে রাখলেনই না সাম্পাওলি! অথচ, গোল মিসের উৎসবে নামা গঞ্জালো হিগুয়েইনকে আরও একটা ম্যাচে সুযোগ দিলেন। খেসারতও গুনেছেন।
প্রথমার্ধে অন্তত দু’টি সুযোগ নষ্ট করেছেন হিগুয়েইন। এর একটি তো আবার মিস করাটাই কঠিন ছিল। গোলমুখের এত কাছ থেকে বল বাইরে পাঠানোই ছিল রীতিমতো কঠিন। ইদানীং এমন কঠিন কাজ হরহামেশাই করছেন হিগুয়েইন। এমনকি স্প্যানিশ গোলরক্ষক ডি গিয়া পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বলটা জালে যায়নি!
হিগুয়েইনদের বদান্যতায় গোলমুখে স্পেনের চেয়ে বেশি শট নিয়েও প্রথমার্ধে ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকল আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, ছন্দে থাকা স্পেন দুটি সুযোগ থেকে দুটিতেই গোল করেছে। মেসি, আগুয়েরো না থাকায় ভোঁতা হিগুয়েইন ছাড়া বেশি বিকল্প ছিল না আর্জেন্টিনার। এজন্যই দায়ী সাম্পাওলিই। স্কোয়াডে মাউরো ইকার্দি কিংবা পাওলো দিবালার মতো খেলোয়াড়দের রাখেননি। অথচ ইতালিয়ান লিগের এই মৌসুমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাকে এই ইকার্দি ও দিবালা। অথচ তাদের বাদ দিয়েই বিশ্বকাপে যাওয়ার ধান্দা সাম্পাওলির! কালকের ম্যাচের পর হয়তো বদলে যেতে পারে এই সিদ্ধান্ত। এটাই ক্ষতের মাঝে একমাত্র মলম আর্জেন্টিনা সমর্থকদের জন্য।
মাঝমাঠে লুকাস বিলিয়া, এভার বানেগা আর হাভিয়ের মাসচেরানো ত্রয়ীকে পরখ করে দেখতে গিয়ে আরেক ধরা খেয়েছেন সাম্পাওলি। বানেগা স্প্যানিশ লিগে দারুণ ফর্মে আছেন। কিন্তু মাসচেরানো আর বিলিয়া দুজনই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাদের কারণে কিনা বানেগাও ঝিম মেরে গেলেন! মাঝমাঠে আর্জেন্টিনা বলের দখল তো নিতেই পারলো না, উল্টো ভুল পাসে বল ঠেলে দিল ইনিয়েস্তা, থিয়াগো, কোকেদের পায়ে। ফলাফল, কাড়াকাড়ি করে গোল দিয়ে গেলে স্প্যানিশরা।
খেলার নূন্যতম খোঁজখবর যারা রাখেন তারা তো আর্জেন্টিনার রক্ষণের কথা জানেনই। বরাবরই সেখানে নানা ফাঁকফোকর থাকেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সেটিকে আরও দুর্বল করে দিলেন সাম্পাওলি। আর গোলাকিপার সার্জিও রোমেরো চোট পেয়ে বের হয়ে যাওয়ায় বোঝা গেলে বিকল্প গোলরক্ষকের বিষয়টি নিয়েও খুব একটা ভাবেননি কোচ। অনেকে বলেন গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছিল তাদের রক্ষণের কারণে। সেবারও রক্ষণ দুর্বল বলে সমালোচনা হচ্ছিল খুব। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে কোচকে রক্ষণের পেছনে ভালোই সময় দিতে হবে।
গোলরক্ষকে ভরসা নেই। ডিফেন্স যা তা। মাঝমাঠ বুড়োদের দখলে। আক্রমণে হিগুয়েইন তো পণ করেছেন গোল দেবেন না বলে। মেসি ছাড়া এ আর্জেন্টিনার আর কী আছে? বাছাই পর্বে মেসি খেলেনি এমন ১২.৫ শতাংশ ম্যাচে জিতেছে আর্জেন্টিনা, মেসি খেলেছেন এমন ম্যাচে জয়ের হার যেখানে ৬০ শতাংশ। শেষ ম্যাচে মেসির জাদুর ছোঁয়া পাওয়া না গেলে বিশ্বকাপটা দর্শকের আসনে বসে হাই তুলে তুলেই কাটাতো হতো আর্জেন্টাইনদের।
কিন্তু ফুটবল আর যাই হোক একার খেলা তো নয়। সুতরাং যে স্কোয়াড নিয়ে সাম্পাওলি আগাচ্ছেন সেটি দিয়ে আর যাই হোক বিশ্বকাপের মঞ্চ কাঁপানো সম্ভব নয়। বরং সমর্থকদের হৃদকম্পনই বেড়ে যাবে বহুগুণে। মেসিও বলেছেন, এই আর্জেন্টিনা ফেবারিট নয়।
দুই মাসের মতো সময় পাচ্ছেন সাম্পাওলি। এর মধ্যে মাথার তালু চুলকে কিছু একটা উপায় বের করতে পারবেন তো? আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আভাস দিয়েছিলেন, এখনো বিশ্বকাপের দল খুঁজে পাননি। সেটা শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলেই হয়। নাহয়, আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে সাম্পাওলির নামটা যে আর বেশিদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না তাতে কোনো সংশয় নেই।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply