ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: আসন কমছে, থাকছে না ‘ঘ’ ইউনিট

|

শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে স্নাতকে ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার ৪০টি আসন কমানোর পরিকল্পনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাবির সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় ওই সংখ্যক আসন কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের চাহিদার আলোকে ডিনস কমিটিতে এ নিয়ে প্রস্তাব তোলা হয়। এর পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঘ’ ইউনিটও থাকছে না।

জানা গেছে, ভর্তি কমিটির এই সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের আসন্ন সভায় আলোচনার পর চূড়ান্ত হবে।

ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে বিদ্যমান ৭ হাজার ১২৫ আসনের মধ্যে ১ হাজার ৪০টি আসন কমিয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৬ হাজার ৮৫ টি আসনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

তবে, আসন সংখ্যা পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে কমলেও কোনো কোনোটিতে আবার বাড়ছে।

আসন বিন্যাসে নতুন রুপরেখা:

বিজ্ঞান অনুষদ:
তেমন একটা পরিবর্তন আসছে না এই অনুষদে। শুধু পরিসংখ্যান বিভাগের আসন ৮৮ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর তাতে পাঁচটি বিভাগে আসন সংখ্যা ৪৬৮ থেকে বেড়ে ৪৭০ হবে।

জীব বিজ্ঞান অনুষদ:
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান (৬০), অণুজীব বিজ্ঞান (৪০) ও মৎস্য বিজ্ঞানে (৪০) আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। আর জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগে আসন সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশে ১২০ থেকে ১০০, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ৭৫ থেকে ৭০, প্রাণিবিদ্যায় ১০০ থেকে ৮০ ও মনোবিজ্ঞানে ১৩০ থেকে কমিয়ে ৮০ করার কথা বলা হয়েছে।

আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ:
পাঁচটি বিভাগের ২৪৫টি আসনের মধ্যে ১০টি কমিয়ে ২৩৫টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এরমধ্যে তিনটিতে বাড়ছে, একটিতে কমছে, বাকি একটিতে অপরিবর্তিত থাকছে।

সমুদ্র বিজ্ঞানে ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪০ ও আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগে ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫টি করার কথা বলা হয়েছে। আর ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ১২০ থেকে কমিয়ে ৮০টি আসন করা হবে। ভূতত্ত্ব বিভাগের (৫০) আসন সংখ্যায় পরিবর্তন আসছে না।

ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদ:
পাঁচ বিভাগের কোনোটিতেই আসন কমবে না। বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২৫ থেকে ৩০ এবং রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২০ থেকে ২৫ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। বাকি তিনটি বিভাগে আসন অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

কলা অনুষদ:
কলা অনুষদের বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে ভর্তি কমিটি সবচেয়ে বেশি আসন কমানোর সুপারিশ করেছে। বর্তমানে অনুষদটির ১৭টি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তিতে আসন রয়েছে ১ হাজার ৮৭৫টি। ভর্তি কমিটি সেখানে ৫৩৫টি কমিয়ে ১ হাজার ৩৪০টিতে পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।

এই অনুষদের বাংলায় ১৩২ থেকে ১১০, ইংরেজিতে ১৫০ থেকে ১১০, আরবিতে ১৫০ থেকে ১০০, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ১০০ থেকে ৭৫, উর্দুতে ১১০ থেকে ৭০, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৯০ থেকে ৫০, ইতিহাসে ১৩০ থেকে ১১০, দর্শনে ১৭০ থেকে ১২০, ইসলামিক স্টাডিজে ১৮৫ থেকে ১০০, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ১৬০ থেকে ১১০, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ৭৫ থেকে ৬৫, ভাষাবিজ্ঞানে ৯০ থেকে ৭০, সংগীতে ৮০ থেকে ৬০, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ১০০ থেকে ৬০ এবং নৃত্যকলা বিভাগে ৩৫ থেকে ৩০টি আসন করা হচ্ছে।

অন্যদিকে এ অনুষদের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজে আসন সংখ্যা ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২৫ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ:
এই অনুষদেও কেবল একটি বিভাগে আসন সংখ্যা বাড়বে। বাকি আটটিতে আসন সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে আসন রয়েছে ১ হাজার ২৫০টি। আর তা কমিয়ে ১ হাজার ৫০ করা হবে।

ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং ও ফাইন্যান্স এই চারটি বিভাগের প্রতিটিতেই আসন সংখ্যা ১৮০ থেকে কমিয়ে ১৫০টি করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট— প্রত্যেক বিভাগে ১১৫ থেকে কমিয়ে ১০০ করার কথা বলা হয়েছে। আর ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের আসন ১৫০ থেকে কমিয়ে ১০০ করার সুপারিশ এসেছে।

আসন বাড়ানো হবে অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে, ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হচ্ছে।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ:
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি বিভাগে আসন রয়েছে ১ হাজার ২২২টি। এই অনুষদে ১৫২টি আসন কমিয়ে ১০৭০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

এই অনুষদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২০০ থেকে ১৫০, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ১০০ থেকে ৮০, সমাজবিজ্ঞানে ১৮৫ থেকে ১৫০, লোকপ্রশাসনে ১১০ থেকে ৯০, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ৬০ থেকে ৪০, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে ৪৫ থেকে ৪০, ক্রিমিনোলজিতে ৬০ থেকে ৫০, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসে ৪০ থেকে ৩০ ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগে ৬০ থেকে কমিয়ে ৫০ করা হবে।

এই বিভাগের অর্থনীতিতে ১২৮ থেকে ১৩০, পপুলেশন সায়েন্সেসে ২৫ থেকে ৪০ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ২৮ থেকে বেড়ে ৪০টি আসন হবে।

কয়েকটি বিভাগে আসন অপরিবর্তিত থাকছে। বিভাগগুলো হলো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (৬৬), নৃবিজ্ঞান(৫৫), টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি (৩০) ও প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজে (৩০)।

চারুকলা অনুষদ:
আসন কমবে মাত্র ৫টি। এ অনুষদের আট বিভাগের মধ্যে কেবল অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগে ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ করার কথা বলা হয়েছে।

ইনস্টিটিউট:
আগের চেয়ে ৪০জন শিক্ষার্থী কম ভর্তির সুযোগ পাবেন। আর তাতে সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৮৬৫টি। ঢাবির ১০টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে তিনটিতে কমানো, দু’টিতে বাড়ানো ও বাকি পাঁচটিতে শিক্ষার্থী আসন অপরিবর্তিত রাখতে সুপারিশ করা হয়েছে।

এর বাইরে ফার্মেসিতে আসন সংখ্যা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ এবং আইনে ১৩০ থেকে কমিয়ে ১১০ নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply