দীর্ঘশ্বাসে লিডসকে বিদায় জানালেন ‘আর্জেন্টাইন পাগল’

|

মার্সেলো বিয়েলসা। ছবি: সংগৃহীত

রক্ষণাত্মক কৌশলকে কোনো অপশন হিসেবেই দেখেন না বলে আধুনিক ফুটবলে ‘এল লোকো’ বা পাগল বলে অনেকের কাছে পরিচিত আর্জেন্টাইন কোচ মার্সেলো বিয়েলসা বিদায় বলতে বাধ্য হলেন ইংলিশ ক্লাব লিডস ইউনাইটেডকে। দলের বাজে ফর্মের ধারাবাহিকতায় টটেনহ্যামের কাছে হেরে লিডসের কোচের পদ হারিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের জুনে লিডসের দায়িত্ব নেয়া বিয়েলসা চাকরি হারালেন ব্যর্থতার দায়ভার কাঁধে নিয়ে, রেলিগেশন অঞ্চলের মাত্র ২ পয়েন্ট উপরে থেকে।

ছবি: সংগৃহীত

১৬ বছর পর লিডস ইউনাইটেডকে প্রিমিয়ার লিগে ফিরিয়ে এনে ক্লাব কিংবদন্তির ইতিহাস হয়ে গিয়েছিলেন মার্সেলো বিয়েলসা। কিন্তু টানা বেশ কয়েকটি ম্যাচ বড় ব্যবধানে হারের ধারাবিকতায় টটেনহ্যামের কাছে ৪-০ গোলে পরাজয়ে বেজে যায় এই ৬৬ বছর বয়সী কোচের বিদায় ঘণ্টা; শেষ চার ম্যাচে যে ২ গোলের পাশে হজম করতে হয়েছে ১৭ গোল!

তবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই কোচের বিদায়ে যেন রক্তক্ষরণ ঘটছে লিডসের ফুটবলার, কোচিং স্টাফ, সমর্থক থেকে কর্তাব্যক্তিদেরও। লিডসের চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া রাদ্রিজ্জানি বলেছেন, লিডসের দায়িত্ব পালনকালে মার্সেলোকে বিদায় জানানোই আমার কাছে ছিল সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত। তার সময়েই দুর্দান্ত তিনটি মৌসুম কাটিয়েছি আমরা, এল্যান্ড রোডে (লিডসের মাঠ) ফিরেছিল সুসময়। ক্লাবের সংস্কৃতিই শুধু পাল্টানো নয়, জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্যও তাকে মনে রাখবে সবাই। কিন্তু এখন ক্লাবের ভালোর জন্য, প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকার জন্যই আমাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

বিয়েলসা আসার আগের শেষ ৭ সিজন পয়েন্ট টেবিলের মাঝখানে থেকেই চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করেছে লিডস। তারপর ‘এল লোকো’র ছোঁয়ায় প্রিমিয়ার লিগে ১৬ বছর পর উঠে আসে এই ক্লাব। বিয়েলসার অধীনে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া লিডস মিডফিল্ডার কেলভিন ফিলিপস বলেন, মার্সেলো আমার মাঝে এমন কিছু দেখেছিল যা দেখতে পাইনি আমিও।

লিডসের আরও বেশ কয়েকজন ফুটবলারই বিয়েলসার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পাগলাটে এই কোচের অধীনে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া স্ট্রাইকার প্যাট্রিক ব্যামফোর্ড বলেছেন, তিনি এসেছিলেন, আর সবার জন্য সবকিছু পাল্টে দিয়েছিলেন চিরদিনের জন্য।

পেপ গার্দিওলা ও মরিসিও পচেত্তিনোর মতো কোচের কাছে ‘বিশ্বের সেরা কোচ’ তকমা পাওয়া মার্সেলো বিয়েলসার কাছে ফুটবলের মানেই হচ্ছে ‘অ্যাটাক, অ্যাটাক অ্যান্ড অ্যাটাক’! তবে দলের সেরা ফুটবলার যেমন, কেলভিন ফিলিপস, অধিনায়ক লিয়াম কুপার, সেরা গোলশিকারি ব্যামফোর্ডদের লম্বা সময়ের ইনজুরিতে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা সম্ভবও হচ্ছিল বিয়েলসার জন্য। কিন্তু রক্ষণাত্মক ফুটবলকে যে কোনো হিসেবের মধ্যেই রাখেন না এই কোচ!

ছবি: সংগৃহীত

তাই পেপ গার্দিওলা বা জিনেদিন জিদানদের মতো আধুনিক ফুটবলের সেরা কোচেরা যাকে গুরু মানেন, সেই মার্সেলো বিয়েলসাকে বিদায় নিতে হচ্ছে এমন এক পরিস্থিতিতে, যা আশা করেনি কেউ। সৌন্দর্য থেকে দায়িত্বের দিকে ফুটবলের যে বিষণ্ণ যাত্রা, তাতেই ব্রাত্য হয়ে পড়লেন এই পাগলাটে ফুটবল দার্শনিক। হাই প্রেসিং ও আক্রমণাত্মক ফুটবলের এই দিকপালের সূত্র থেকেই পাওয়া আরও গোছানো অনুসিদ্ধান্তে গ্রেট কোচ হয়েছেন গার্দিওলা, জিদান, পচেত্তিনোরা।

মনোযোগের কেন্দ্রে আসতে চাওয়ার তাড়না ছাড়াই দর্শন, নম্রতা ও সুন্দর ফুটবলের হারিয়ে যাওয়া বিপ্লবকে ফিরিয়ে এনে সমর্থকদের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন বিয়েলসা। ম্যাচ হারলে নয়, বাজে পারফরমেন্সের জন্য তিনি ফুটবলারদের দিয়ে সারা মাঠের ঘাস কাটাতেন এটা বোঝাতে যে, দর্শক-সমর্থকরা অনেক কষ্টের পরেই টিকেট কেটে আসে খেলা দেখতে। তাই তারা যেন কখনোই খেলা দেখে বিরক্ত না হয়! ব্যামফোর্ড যেমন বললেন, বিয়েলসার বিদায় তাই কেবল খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও সমর্থকদের কান্নাতেই শেষ হয়ে যাবে না; লিডসে এই পাগল কোচের পরম্পরা থেকে যাবে, যেমন থাকবে নরউইচকে হারানোর ম্যাচে বিয়েলসা-বলের জন্মের কিংবদন্তি।

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply