মেসি-আলভারেজ যাদুতে ‘প্রতিশোধ’ নিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

|

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালে দুই দলের দ্বৈরথের সাথে ভিন্ন কিছুই ঘটবে আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার সেমিফাইনালে; এমন কথাই বলা হচ্ছিল লুসাইলের মহারণের আগে। ভিন্ন হয়েছে ঠিকই, তবে স্কোরলাইন এবারও ৩-০। লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে এক রকম প্রতিশোধ নিয়েই মেসি-আলভারেজের জাদুতে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে এখন আর্জেন্টিনা। সপ্তামাকাশ ছুঁতে আর মাত্র এক ধাপ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি।

আবারও নকআউট পর্বের ম্যাচে মেসি গোল করলেন, মেসি গোল করালেন। যেভাবে খেললেন তাতে যেন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গেলেন সময়কেও! ৩৫ বছর বয়সী এই ফুটবল বিস্ময়ের ড্রিবলিং, ডিফেন্স চেরা রান কিংবা পাসে ধারাভাষ্যকাররাও বারবার বলতে বাধ্য হলেন, ধন্দে পড়ে যাচ্ছেন তারা! বয়স কি তার জন্য উল্টো দিকে ছুটছে নাকি! সম্ভাব্যতার সকল সীমাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন যিনি ক্যারিয়ার জুড়েই, ক্রোয়াটদের দুর্ভেদ্য ডিফেন্সকে বারবার ভেঙে যেন মদ্রিচদের আবারও দেখালেন, জীবন্ত দৈবের সামনে কতটা অসহায় নশ্বর মানুষ!

জুলিয়ান আলভারেজও যেন কম গেলেন না! মেসির পেনাল্টি গোলের পর ৩৯ ও ৬৯ মিনিটের দুই লক্ষ্যভেদে ম্যাচ থেকে ক্রোয়েশিয়ার সম্ভাবনা এক রকম বিদায়ই করে দিলেন এই ম্যান সিটি ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধে ম্যাচের সেরা দৃশ্যের সৃষ্টিও হয়েছে জুলিয়ান আলভারেজের পায়ে। কিছুক্ষণ আগেই পেনাল্টি আদায় করেছিলেন যে আলভারেজ, তিনিই সলো রানে ভেদ করে গেলেন ক্রোয়াট ডিফেন্সের হৃদপিণ্ড! বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন সসা, তাই ভাগ্যের কিছুটা ছোঁয়াও পেয়েছেন এই স্ট্রাইকার। তবে ৩৯ মিনিটে দুর্দান্ত গোলে লিভাকোভিচকে পরাস্ত করে ফাইনালের দিকে দলকে অনেকটাই এগিয়ে দেন ম্যান সিটির এই তরুণ ফরোয়ার্ড।

৬৯ মিনিটের গোল নিয়ে কথা বলতে গেলে আবার একসাথে বলতে হবে মেসি-আলভারেজ জুটির কথা। মেসির পায়ে যখন বল এলো, তার সঙ্গেই ছিলেন মার্কার জস্কো গার্দিওল। চলতি আসরের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের তকমা পাওয়া গার্দিওল পারেননি মেসির পা থেকে বল কেড়ে নিতে। পায়ের সাথে বলকে আঠার মতো লাগিয়ে মেসি ড্রিবলিং করে এগিয়ে যান টাচলাইন ধরে। গোলপোস্টের সাথে দুরূহ কোণ থেকে যে মাইনাসটি করেন আর্জেন্টাইন এলএমটেন, তাতে প্লেসিং শটে লিভাকোভিচকে পরাস্ত করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি আলভারেজের।

অথচ ম্যাচের শুরুতে খেলার চিত্র দেখে এমন স্কোরলাইন অনুমান করা কিছুটা কঠিনই হতো। শুরু থেকেই মাঝমাঠেই হয়েছে বল দখলের লড়াই। সেখানে মদ্রিচ-ব্রোজোভিচ-কোভাচিচ ত্রয়ীই বেশিরভাগ সময় আধিপত্য করেছে। মিডফিল্ডে চারজন খেলোয়াড়কে নিয়েও খুব বেশি সুবিধা করতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় হুট করেই। ৩২ মিনিটে আগুয়ান জুলিয়ান আলভারেজকে ডি বক্সে ফাউল করে বসেন ক্রোয়াট গোলকিপার লিভাকোভিচ। রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। ৩৪ মিনিটে নেয়া স্পটকিকে লিভাকোভিচকে কোনো সুযোগই দেননি লিওনেল মেসি। এর মাধ্যমে চলতি বিশ্বকাপে ৫ম গোল করে এমবাপ্পের সাথে যৌথভাবে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সবার আগে এখন এই আর্জেন্টাইন তালিসম্যান। সেই সাথে বিশ্বকাপে মোট ১১টি গোল করে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে টপকে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়লেন এই ফুটবল জাদুকর। তবে, শেষ ধাপ এখনও বাকি। সেখানে ফাইনালে মেসিদের প্রতিপক্ষ হবে ফ্রান্স-মরক্কোর সেমিফাইনালের জয়ী দল।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply