সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার ঐতিহাসিক চুক্তি বদলে দিতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক চিত্র। চীনের মধ্যস্থতায় রিয়াদ-তেহরান দূরত্ব কমলে ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাকের মতো বিবদমান দেশগুলোয় শান্তি ফিরতে পারে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে চীনের প্রভাব বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে এ চুক্তি। খবর এপি নিউজের।
খবরে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের একের পর এক ফর্মুলা যখন ব্যর্থ, তখনই সৌদি-ইরান সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ঘোষণা। ৭ বছর বিচ্ছেদের পর জোড়া লাগছে কূটনৈতিক সম্পর্ক।
এদিকে সৌদি-ইরান সমঝোতাকে সতর্কভাবে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ চুক্তি যে তাদের খুব একটা খুশি করতে পারেনি তা স্পষ্ট। এমনকি বিষয়টি আগাম অনুমানও করতে পারে নি তারা। ইরানের গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরাজয় হিসেবে দেখানো হচ্ছে সৌদি-ইরান চুক্তিকে। আর ছক্কা হাঁকিয়েও বেশ ধীরস্থির বেইজিং। তারা বলছে, শান্তির পক্ষে যারা, বিজয় হয়েছে তাদের।
চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ওয়াং ই বলেন, সমস্যা যত জটিলই হোক পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনা হলে ইতিবাচক সমাধান আসবেই। এ চুক্তি সে বার্তাই দিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মধ্যপ্রাচ্যের জনগণই তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্য কোনো পক্ষ নয়।
দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর চুক্তির ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে। এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে ইয়েমেনে, যেখানে সৌদি সমর্থিত প্রশাসন আর ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে চলছে বিরোধ। দুই দেশের সুসম্পর্কের জেরে সিরিয়া-ইরাকেও শান্তি ফিরবে বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
হুতি গোষ্ঠীর পররাষ্ট্র প্রধান আহমেদ আল আলি বলেন, আশা করছি এ চুক্তি কেবল ইয়েমেনেই নয়, সিরিয়া, লেবানন, ইরাকসহ যেসব জায়গায় সংঘাত চলছে সেসব অঞ্চলেও শান্তি ফিরবে। নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আসবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র যে চীনের প্রভাব অগ্রাহ্য করতে পারবে না, সেটিই প্রমাণিত হলো এই চুক্তির মধ্য দিয়ে। ইসরায়েলের সাথে আরবদের সম্পর্ক স্বাভাবিকে ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টাও ধাক্কা খাবে এবার। ভাটা পড়বে অস্ত্র ব্যবসাতেও।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক কারেন কোয়াইতকোস্কি বলেন, ইরান-সৌদি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক মেনে নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হবে। এমনকি চুক্তি যাতে ব্যর্থ হয় সে চেষ্টাও করতে পারে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একক প্রভাবও বাধাগ্রস্ত হবে।
আঞ্চলিক সংঘাতে বরাবরই পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সুন্নি প্রধান সৌদি আরব ও শিয়া প্রধান ইরান। ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় দুই দেশের।
এএআর/
Leave a reply