শান্তর ইনিংসের অপমৃত্যু, মুশফিক-মিরাজের জুটিতে টাইগারদের সাড়ে তিনশো

|

ছবি: সংগৃহীত

দিনে খেলা হয়েছে ৭৯ ওভার। তাতেই জেগেছিল টেস্টের একদিনে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের সম্ভাবনা। ১২ রানের জন্য তা হয়নি। ৫ উইকেটে ৩৬২ রান করে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে লিটন দাসের দল। এর নায়ক যদি হন নাজমুল হোসেন শান্ত, তবে পার্শ্বনায়কের জায়গায় মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী মিরাজও থাকবেন। আফগান বোলারদের বিশৃঙ্খল বোলিংয়ের ভূমিকাও কম নয়। টেস্ট ম্যাচের একদিনে স্পিনারদের দ্বারা ১১টি নো বল! এই পরিসংখ্যানকে রীতিমতো অপরাধের জায়গায় ফেলে দিতে পারেন টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে শুদ্ধবাদী যেকোনো দর্শক কিংবা বিশ্লেষক।

নো বলের কল্যাণে জীবন পেয়েও কাঙ্ক্ষিত দেড়শো রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। মিরপুরে হয়তো এই ঘটনা ছাড়া নেই কোনো অপ্রাপ্তি। নিজের ঢঙেই হয়তো দেড়শো পেরোতে চেয়েছিলেন এই সেঞ্চুরিয়ান। এর আগে, আক্রমণাত্মক শটগুলো ঠিকঠাক মতো গন্তব্যে পৌঁছালেও এবার আর হলো না। আফগান স্পিনার আমির হামজার বলে কাউ কর্নারে নাসির জামালের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এর আগে-পড়ে মুমিনুল-লিটনরা পারেননি দায়িত্বশীল পারফর্ম করতে। তবে দিনের শেষ সেশনে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী মিরাজের নিয়ন্ত্রিত শাসনে মিরপুর টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই রেখেছে বাংলাদেশ।

মিরপুরে ম্যাচের শুরুতে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান আফগান দলনেতা হাশমতউল্লাহ শহিদি। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে নিজাত মাসুদের করা বলে মাত্র ১ রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার জাকির হোসেন।

তবে সমস্যায় পড়তে হয়নি টাইগারদের। দ্বিতীয় উইকেটে খেলতে নেমে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে আফগান বোলারদের শাসন করে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। এ সময় দুজন মিলে গড়েন ২১২ রানের জুটি। ব্যক্তিগত অর্ধশতক ছাড়িয়ে শতক পূর্ণ করেন শান্ত। একই পথে ছিলেন জয়ও। কিন্তু রহমত শাহের করা বলে থামেন ব্যক্তিগত ৭৬ রানে। আর এখনও পর্যন্ত এই জুটিই ছিল টাইগার ইনিংসের হাইলাইটস।

মুমিনুল হক এখনও তার ব্যাডপ্যাচ কাটাতে পারেননি। বেশ কয়েকবার পরাস্ত হওয়ার পর ১৫ রান করে বিদায় নিয়ে তিনি ইতি টানেন এই অযাচিত সংগ্রামের। মুমিনুলের পর বেশিক্ষণ থাকা হয়নি শান্তরও। আমির হামজাকে অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন শান্ত। ধরা পড়ে যান নাসির জামালের হাতে। ২৩ টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা হাঁকানো শান্ত থামেন ১৪৬ রানে। ৮৩.৪২ স্ট্রাইক রেটের এই ইনিংসের গুরুত্ব আছে পরিসংখ্যানগত কারণেও। বাংলাদেশের পক্ষে ১৪৬ বা তার চেয়ে বেশি রানের ইনিংসে এরচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট আছে কেবল সৌম্য সরকারের নামের পাশে। ২০১৯ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সৌম্য ১৪৯ রান করেছিলেন ১৭১ বলে, স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৭.১৩।

ছয় নম্বরে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক লিটন দাস। তখন টানা বেশ কয়েক ওভারে কোনো বাউন্ডারি হজম না করে টাইগার ব্যাটারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় আফগানরা। করিম জানাতের বলে ছক্কা মেরে সেই চাপ উড়িয়ে দেয়ার ইঙ্গিত দিলেও তা স্থায়ী হয়নি। জাহির খানের অফস্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন তিনি। মাত্র ৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন লিটন।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তৃতীয় সেশনে টাইগারদের সংগ্রহ ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৫০ রান। মুশফিকুর রহিম ৩৭ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট করছেন ৩৫ রান নিয়ে। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এরই মধ্যে ৬০ রান যোগ করেছেন তারা। ১ উইকেটে ২১৮ থেকে ৫ উইকেটে ২৯০- মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ৭২ রানের মধ্যে ৫ উইকেটে হারিয়ে এক পর্যায়ে শঙ্কা জেগেছিল, শান্ত-জয়দের বীরত্ব হয়তো শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারবে না লিটন দাসের দল। তবে সেই শঙ্কা সরিয়ে মুশফিক-মিরাজের ব্যাটে টেস্টের প্রথম দিনেই সাড়ে তিনশো রান নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

/আরআইএম/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply