সমুদ্রের শহরে পর্যটকের নিরাপত্তায় কক্স-ক্যাব

|

সেফটি ইজ এজ সিম্পল এজ এবিসি
অলওয়েজ বি কেয়ারফুল

সমুদ্র দেখতে সম্প্রতি কক্সবাজারে যেয়ে থাকলে হয়তো চোখে পড়েছে, এমন আহ্বান। দেখে থাকলে পাঠক নিশ্চয় বিষয়টি নিয়ে অবগত। আর সাগর পাড়ে যারা যাননি বা গেলেও চোখে পড়েনি তাদের খুলে বলা যাক, কেন এই আহ্বান।

তেইশের শুরু, কক্সবাজার জেলা পুলিশের ট্রাফিকের দায়িত্ব পান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী। এরপর তিনি ভাবতে থাকেন, সমুদ্রের শহরে সড়কে শৃঙ্খলার পাশাপাশি নিরপত্তার বিষয়টি কীভাবে দেখভাল করা যায়। সেই সাথে স্মার্ট ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও।

ভাবনা-চিন্তার একপর্যায়ে এই পুলিশ কর্মকর্তার মাথায় ধরা দিলো কক্স-ক্যাবের ধারণা। যেই উদ্যোগের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরের ইজিবাইক, টমটম, টুরিস্ট জিপ ও চালকেরা নিবন্ধিত হবেন। তাদের তথ্য সম্বলিত একটি কার্ড ঝুলিয়ে রাখা হবে এসব পরিবহনে। আর ওই কার্ডে থাকবে বারকোড, যা স্ক্যান করলে গাড়িচালকের বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। ফলে কোনো চালক পর্যটকের সঙ্গে খারাপ আচরণ বা শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ করলে সহজে আইনের আওতায় আনা যাবে। আগে এমন ঘটনা ঘটলে অনেক সময় শনাক্ত করা যেতো না। ইতোমধ্যে এর মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার ঘটনা কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ফেসবুক পেজে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি বিদেশিরাও প্রশংসা করছে কক্স-ক্যাবের।

রিস্ক টকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিড তার লিংকডইনে এই পোস্টটি করেন।

কক্স-ক্যাবে যত সুবিধা

⚫ চালকের নিবন্ধন ও তথ্য: জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কক্স-ক্যাবের ডেটাবেজে কেউ অন্তুর্ভুক্ত হতে পারবে না। তাই কোনো রোহিঙ্গা বা মিয়ানমারের নাগরিক কিংবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক লোক গাড়ি চালালে সহজে শনাক্ত করা যাবে।
এছাড়া, কোনো ব্যক্তির নামে সিডিএমএস ডেটাবেজ পর্যালোচনায় পূর্বে একাধিক ছিনতাই, চুরির মামলায় অভিযুক্তের তথ্য পেলে কিংবা পর্যটন এলাকায় এই ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে অনিরাপদ চালক হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ হবে।

ট্রাফিক আইন না মানা কিংবা ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়ানোর ওপর ভিত্তি করে কক্স-ক্যাব ডেটেবেজে চালকদের ওয়ার্নিং, নেগেটিভ ও ব্ল্যাক-লিস্টেড ক্যাটাগরিভুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো চালক পর্যটন এলাকায় ছিনতাই বা চুরির মতো অপরাধে জড়িত হয়ে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে তাকে ব্ল্যাক লিস্টেড করে অনিরাপদ চালক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

গত এপ্রিল পর্যন্ত শতাধিক ট্যুরিস্ট জিপ, প্রায় অর্ধশত ট্যুরিস্ট বাস, ৩ হাজারের বেশি টমটম এবং ৪২০০ এর অধিক চালক কক্স-ক্যাবে নিবন্ধন করেছেন বলে জানিয়েছেন জসিম উদ্দিন চৌধুরী। এর মধ্যে প্রায় দেড়শ চালক এখন গাড়ি চালনায় সক্রিয় নয়। নিবন্ধিত টমটম চালকদের গোলাপি রঙের ড্রেস দেয়া হয়েছে।

⚫ শহরে প্রবেশে ট্যুরিস্ট বাসের অনুমতি: কক্সবাজারে শহরে কোনো ট্যুরিস্ট বাস প্রবেশ করতে চাইলে কক্স-ক্যাবের মাধ্যমে অনুমতি নিতে পারবে। এজন্য coxscab.com-এ গিয়ে আবেদন করতে হবে। আগে ভ্রমণের পূর্বেই সমুদ্র শহরে এসে বাস প্রবেশে অনুমতি নিতে হতো। এছাড়া আবার অনুমতি না নিয়ে শহরে প্রবেশ করে অবৈধ পার্কিং করে রাখতো বাস। এখন অনুমতি নিয়ে শহরে ঢুকলে পর্যটকদের নামিয়ে দিয়ে নির্ধারিত পার্কিং জোনে চলে যেতে হবে বাসকে।

⚫বাস সংক্রান্ত তথ্য: কক্সবাজার শহর থেকে কোন বাসটি ছেড়ে যাবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জানাতে হবে ট্রাফিক পুলিশকে। এজন্য কক্স-ক্যাবের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট করতে হবে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে। তাতে গাড়ি, চালক ও সহকারীর তথ্য জানাতে হবে। যা বাসের যাত্রীরাও জানতে পারবেন অনলাইনেই। এছাড়া বাসের শিডিউল দেখে যাত্রীরা টিকিট কাটার সুযোগ পাবেন। এই সুবিধা এখনও চালু হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব এটি চালু করার কথা জানিয়েছে কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশ।

⚫আরও অন্যান্য: সমুদ্র নগরীতে ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ, হোটেল ও রিসোর্ট, ট্যুরিস্ট স্পট ও পার্ক, ট্যুর অপারেটর, শহরের মধ্যে টমটমের ভাড়ার তালিকার তথ্যও এতে মিলবে।

কক্স-ক্যাবের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বললেন, পর্যটনের ক্ষেত্রে ট্রাফিক বড় বিষয়। চালক নিবিন্ধত থাকলে এবং পরিবহনের ডেটাবেজ থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অনেকটা এড়ানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য। যাদের অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কক্স-ক্যাবের কাজ শুরুর সময় এ বিষয়টিও মাথায় ছিল। আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে কক্সবাজারের খ্যাতি থাকলেও পর্যটনবান্ধব শহর, উন্নত ও নিরাপদ যানবাহন সুবিধা এখনও পুরোপুরি গড়ে তোলা যায়নি, সেক্ষেত্রে কক্স-ক্যাব নিসন্দেহে ভূমিকা রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার নিচ্ছেন জসিম উদ্দিন চৌধুরী।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই উদ্যোগের যাত্রা। কয়েকমাস না পেরুতেই কক্স-ক্যাবের জন্য গত অক্টোবরে স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২৩ পুরস্কার পান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধানে অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেয়া হয়। সাধারণ ব্যক্তিগত সরকারি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার পান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট সিটি গড়তে হবে। আর স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে কক্স-ক্যাবের মতো উদ্যোগ সহায়তা করবে। যাত্রীদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি টু মেক স্মার্ট সোসাইটি, টু বিল্ড স্মার্ট বাংলাদেশ।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply