গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আগ্রহ নেই। এর পিছনে প্রধান কারণ যে অর্থ, তা নানাভাবে প্রমাণিত। অভিভাবক-ভর্তিচ্ছুদের সীমাহীন দুর্ভোগ-হয়রানি আমলে নেয়া হচ্ছে না। নানা সমালোচনার মধ্যেও সনাতন পদ্ধতিতেই পরীক্ষা চলছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র অনেকটা উট পাখির মতো। আপনি যত জোরেই চিৎকার করেন প্রশাসনের কানে তা ঢুকবে না। কারণ, মাথাটা তো আগে থেকেই অপদার্থের ভিতর গুজে রাখা হয়েছে। তবে উটপাখির সাথে একটা মৌলিক পার্থক্যও আছে। আর তা হলো, প্রাণীটি বিপদে পড়লে এমন বেকুবের মতো আচরণ করে, আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেন স্বার্থ বিবেচনায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার রেকর্ড ৩ লাখ ১৬ হাজার ১২০ জন ভর্তিচ্ছুক পরীক্ষার্থী আবেদন করেন। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়ায় গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিনে এক্সাম হলে উপস্থিতই হতে পারেনি তাদের অনেকে। মহাসড়কে যানজট কেড়ে নিয়েছে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ার স্বপ্ন। এর দায় কার? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নয়, এটা নিশ্চিত। কারণ, এরই মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করে প্রক্টর মহাদয় জানিয়েছেন তাদের কিছুই করার নেই। তাহলে দায় অবশ্যই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের। সড়কে যানজট থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সে কথা ভেবে কেন তারা কয়েক দিন আগেই রওনা করলো না। কিংবা উড়াল পথেও তো রাজশাহী পৌঁছানো যেত। এসব যুক্তিরও কিন্তু একটা দম আছে! আমার বিশ্বাস, নিয়তি আঁচ করতে পারলে তা করতেও পিছপা হতেন না সামর্থ্যবানরা। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে হয়তো শেষ সম্বলটুকুও অন্যের হাতে তুলে দিতেন। কিন্তু যাদের তাও করার উপায় নেই? সেই হতভাগ্য পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রক্টর সাহেবের মহান উক্তি যথার্থই বৈকি! কারণ, শিক্ষামন্ত্রী তো অনেক আগেই বলেই দিয়ছেন কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে তা ঠিক করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করা ছাড়া সরকারের তেমন কিছুই করার নেই।
এ সবের বাইরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আর তা হলো পরীক্ষার্থীর মেসে অবস্থানকালীন ফি। অর্থাৎ মেস মালিককে কত টাকা দিতে হবে তার হিসাব। দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা বেশ গুরুত্ব দিয়ে খবরটি পাঠকের নজরে এনেছে। সেখানে বলা হয়েছে মেসে থাকার জন্য পরীক্ষার্থীদের জনপ্রতি একশ’ টাকা করে গুণতে হবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত পুলিশও। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন বিধি আরোপ। শিক্ষার্থীরা অবশ্য বলছে এটা নতুন কিছু নয়। সেখানে আগে থেকেই ভর্তি-ইচ্ছুদের কাছ থেকে কমবেশি চাঁদা আদায় করতেন মেস মালিকরা। তবে আদায় প্রক্রিয়ায় কোন শৃঙ্খলা ছিল না। যার কাছে যেমন পাওয়া যেত, তাই নেয়া হতো। প্রচলিত সেই মগের মল্লুকের গতি টেনে ধরতেই এই সিদ্ধান্ত। এর মধ্য দিয়ে অবশ্য অবৈধ্য আয়কে এক ধরনের বৈধ্যতার মোড়ক দেয়া হয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের হয়রানি কমাতে প্রশাসনের এই উদ্যোগ কিছুটা হলেও হয়তো কাজে আসবে। মেস মালিকরা নির্ধারিত টাকার বেশি দাবি করলে পরীক্ষার্থীরা এখন অন্তত প্রতিবাদ করতে পারবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদের দাবিদার। কিন্তু ভেবে অবাক লাগে ছোট-বড় এমন হাজারো সমস্যার মূলে যে পরীক্ষা পদ্ধতি তা নিয়ে তাদের তেমন মাথা ব্যাথা নেই। অথচ এক্ষেত্রে কত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মেডিকেল কলেজগুলো। সমন্বিত পদ্ধতি চালুর পর কত সহজে শেষ হচ্ছে চিকিৎসা শাস্ত্রে আগ্রহীদের ভর্তি প্রক্রিয়া! আসলে আগাছার শিকড়ের চেয়ে ডালপালা কর্তনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের নেক নজর! কারণ এখাতে প্রচারণার সাথে পকেট ভারির নিশ্চয়তা বেশি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জেলা সমিতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে সেখান বিনা অর্থে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে, ভর্তি পরীক্ষার কারণে স্থানীয় হোটেল মালিরা যেন ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান সংগঠনের নেতারা।
রাকিব খান: সাংবাদিক
Leave a reply