বল হাতে আগে কাজটা করে রেখেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। দীর্ঘদিন পর জ্বলে উঠেছিলেন তিনি। দুরন্ত গতি, দুর্দান্ত স্লোয়ার-কাটার ও ভয়ংকর বাউন্সারে সিলেট থান্ডার ব্যাটসম্যানদের নাচিয়ে ছেড়েছিলেন ফিজ। তাতে টার্গেট নাগালের মধ্যে রেখেছিল রংপুর রেঞ্জার্স। পরে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালালেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট ও নাঈম শেখ। তাতে উড়ন্ত জয় তুলে নিয়েছে উত্তরবঙ্গের দলটি। ‘চায়ের দেশকে’ ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। এ নিয়ে জয়ের ধারায় ফিরল রংপুর। আর হারের বৃত্তে বন্দি থাকল সিলেট।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভূমিকাতেই হোঁচট খায় রংপুর। এবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন শেন ওয়াটসন। ওয়ানডাউনে নেমে নাঈম শেখকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। একপর্যায়ে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। দুজনই তোপ দাগাতে থাকেন। তাতে বনবন করে দলের রানের চাকা।
পথিমধ্যে ফিফটি তুলে নেন ডেলপোর্ট। পরে আরো আগ্রাসী হন তিনি। তাতেই ডেকে আনেন নিজের সর্বনাশ। নাভিন-উল হককে আক্রমণাত্মক হয়ে খেলতে গিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এ ব্যাটার। ফেরার আগে ২৮ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৬৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি।
এরপর একই বোলারের বলে তড়িঘড়ি ফেরেন লুইস গ্রেগরি। তবে তাতে সমস্যা হয়নি। ততক্ষণে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় রংপুর। মোহাম্মদ নবীকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন নাঈম। ফিফটির পথে ছিলেন তিনি। তবে সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ৫০ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন নাঈম। আর ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন নবী। ১৮ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে রংপুর।
সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় সিলেট। স্কোরবোর্ডে কোনো রান না ওঠার আগেই আরাফাত সানির শিকার হন ইনফর্ম আন্দ্রে ফ্লেচার। এরপর মুকিদুল ইসলামের বলে দ্রুত ফেরেন বিধ্বংসী জনসন চার্লস।
সূচনাতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে সিলেট। পরে অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ মিঠুন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যান তারা। ক্রিজে সেট হয়ে চোখ রাঙাচ্ছিলেন এ জুটি। তবে সেটা ভালোভাবে নিতে পারেননি রংপুর রেঞ্জার্সের ফিল্ডাররা। মোসাদ্দেককে রানআউটে কেটে ফেরান নাঈম শেখ।
এরপর শেরফান রাদারফোর্ডকে নিয়ে খেলা ধরার চেষ্টা করেন মিঠুন। তবে তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি এ ক্যারিবিয়ান। লুইস গ্রেগরির বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরত আসেন তিনি। এতে ফের বিপর্যয়ে পড়ে সিলেট। খানিক পর মোহাম্মদ নবীর বলে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন মিলন।
সতীর্থরা একে একে যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যে বুক চিতিয়ে লড়েন মিঠুন। পথিমধ্যে লড়াকু ফিফটিও তুলে নেন তিনি। তবে ধ্বংসস্তূপে পড়ে একপর্যায়ে হার মানেন এ মিডলঅর্ডারও। মোস্তাফিজুর রহমানের ভয়ংকর বাউন্সারে সানির তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৪৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন মিঠুন।
তার বিদায়ের পর দলের রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন সোহাগ গাজী ও নাঈম হাসান। তবে তারা বিচ্ছিন্ন হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে সিলেট। নিজের ও দলীয় শেষ ওভারের প্রথম ২ বলে এ দুজনকে শিকার করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান মোস্তাফিজ। যদিও তা পারেননি তিনি। তবে তার তৃতীয় বলে মনির হোসেন রানআউট হলে দলীয় হ্যাটট্রিক হয়।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৩ রান তুলতে সামর্থ হয় সিলেট। তাদের এ রানে বেঁধে রাখার নেপথ্য কারিগর মোস্তাফিজ। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন তিনি। প্রতিটি উইকেটই মূল্যবান। সবকটিই টার্নিং পয়েন্টে নেন কাটার মাস্টার। ম্যাচসেরা হয়েছেন ফিজ।
Leave a reply